ঢাকাশনিবার , ২১শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উদ্যোক্তা
  6. কর্পোরেট
  7. কৃষি ও প্রকৃতি
  8. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. পর্যটন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঈদে তাজহাট জমিদার বাড়িতে নামবে দর্শনার্থীর ঢল

Md Abu Bakar Siddique
জুন ৩, ২০২৫ ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঈদকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর তাজহাট জমিদার বাড়ি এবং দিনাজপুরের কান্তজীউ মন্দিরে ২০ লাখের বেশি দর্শক ভিড় জমাচ্ছেন। এতে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদকে ঘিরে সরকারের রাজস্ব রাড়ছে। এর মধ্যে অন্যতম রংপুর নগরীর তাজহাট জমিদার বাড়ি। এবারের ঈদে সরকারি ছুটি ৯ দিন থাকলেও তাজহাট জমিদার বাড়ির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি নেই। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ঈদের দিন এবং এর পরের দিনও দায়িত্ব পালন করবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এবার আশা করা হচ্ছে ঈদের ছুটিতে ৫০ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর সমাগম হবে। এলক্ষ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

রংপুর তাজহাট জমিদার বাড়ি ১৯৯৫ সালে এ ভবনটিকে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০০২ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। এর নাম রাখা হয় রংপুর জাদুঘর। বর্তমানে এটি ১৬ দশমিক ৬ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই জাদুঘরে তিনশ’র বেশি মূল্যবান নির্দশন রয়েছে। প্রতিদিন এখানে দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা এই বাড়ির সৌন্দর্য দর্শনে আসেন।

এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে যেটুকু জানা গেছে তা হল, তাজহাট জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন মান্নালাল রায়। তিনি ভারতের পাঞ্জাব থেকে এসেছিলেন। পেশায় ছিলেন স্বর্ণকার। স্বর্ণখচিত টুপি বা তাজ নির্মাণ করায় এই অঞ্চলের নাম তাজহাট হয়েছে। জাতিতে ক্ষত্রিয় হলেও তার শিখ ধর্মের প্রতি দুর্বলতা ছিল। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাথে শিখদের সংঘাতের সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী মান্নালাল পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে রংপুরের মাহিগঞ্জে বসতি স্থাপন করেন। মাহিগঞ্জে তিনি হীরা মনি মুক্তা খচিত টুপি (তাজ) বিক্রি করতেন। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় তার জমিদারি। রংপুর শহর থেকে পূর্ব দিকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থান এই জমিদার বাড়ির। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরে বাড়িটি নতুন করে তৈরি করা হয়। ৫৬ একর এলাকাজুড়ে এই কমপ্লেক্সটি। পূর্বমুখী দোতলা এই জমিদার বাড়িটির সামনের দিকে প্রায় ৭৭ মিটার দৈর্ঘ্য। বাড়ির সামনের দিকে রয়েছে বড় একটি দরদালান। এই দরদালানে ওঠার জন্য শ্বেতপাথরে আবৃত রয়েছে দৃষ্টি নন্দন সিঁড়ি। বাড়ির ছাদের মূল অংশে আট কোনা পিলারের ওপর অবস্থিত রেঁনেসা গম্বুজ। এই গম্বুজের বৈশিষ্ট হলো এটি আংশিকভাবে সরু পিলারের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রাসাদের গৃহমুখের দুই প্রান্তে অষ্টাভুজাকৃতির বাইরে বেরিয়ের যাওয়ার অংশ রয়েছে। প্রাসাদটির গাড়ি বারান্দা প্রায় ১০ মিটিার দীর্ঘ। গাড়ি বারান্দার ওপরে যে ঝুল বারান্দা রয়েছে তার ছাদ চারটি পিলারের ওপর অবস্থিত।

এই প্রাসাদের দুই প্রান্তের বারান্দাতেও ত্রিকোণাকৃতির ছাদ রয়েছে। প্রাসাদের ভূমি নকশা অনেকটা ইংরেজি ট এর মতন। প্রাসাদে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চোখ পড়ে ১৪ /১৯ মিটার বিাশাল হলঘর। হল ঘরের দুই দিকে একটি করে ঘর রয়েছে। প্রাসাদটির ভেতর ৩ মিটার প্রসস্ত একটি টানা বারান্দা রয়েছে। প্রধান ব্লকের উত্তর দিকে দোতলায় বিশাল একটি কাঠের সিঁড়ি রয়েছে। পুরো ভবনে মোট ২২টি ঘর রয়েছে। গোপাল লাল রায় জমিদারি দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বর্তমান ভবনটির নির্মাণ কাজ করেন। ১৯১৭ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ইতালি থেকে আমদানিকৃত শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরি করা হয় বাড়ির সন্মুখভাগের সিঁড়ি। ভবনের সামনে মার্বেল পাথরের সুদৃশ্য একটি ফোয়ারা আজো বিদ্যমান।

এই জমিদার বংশের মধ্যে জনপ্রিয় জমিদার ছিলেন গিরিধারি লাল রায়। ১৮৭৯ সালে তার মৃত্যু হলে তার ছেলে গোবিন্দ লাল রায় জমিদারি লাভ করেন। গোবিন্দলাল রায় প্রজাহিতৈষী ও দানশীলতার জন্য ১৮৮৮ সালে বৃটিশ সরকার কর্তৃক রাজা, ১৮৯২ সালে রাজা বাহাদুর ও ১৮৯৬ সালে মহারাজা উপাধিতে ভূষিত হন।

এই সময়টিই ছিল তাজহাট জমিদারদের সোনালি অধ্যায়। ১৮৯৭ সালে তার মৃত্যু হলে তার ছেলে গোপাল লাল রায় জমিদার নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন এই বংশের শেষ জমিদার। তিনিও ১৯১২ সালে রাজা ও ১৯১৮ সালে রাজাবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে কুমার গোপাল রায়ের বংশধররা ভারতে চলে যান। তাদের আর এদেশে ফিরে আশা হয়নি। ১৯৫২ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর জমিদার বাড়িটি চলে যায় কৃষি বিভাগের অধীনে। এখানে গড়ে উঠে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জমিদার বাড়ির অনেক মূল্যবান সম্পদ খোয়া যায়। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তাজহাট জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

এদিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রংপুর ও রাজশাহী  বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর  এবং রাজশাহী বিভাগে ২৬০ টি প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ রয়েছে। রংপুরে  তাজহাট জমিদার বাড়ি, লালবিবি মাজার, বেগম রোকেয়ার বসতভিটা, মিঠাপুকুর মসজিদ, দিনাজপুর জমিদার বাড়ি, কান্তজীউ মন্দির, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বিরাট রাজার ঢিবি, পঞ্চগড়ের খালপাড়া প্রাচীন টিবি, মর্কদম গড় , ভিতরগড় আবেষ্টনী দেওয়াল, দেবিগঞ্জের গোলকধাম মন্দির, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, রাজা টংকনাথ চৌধুরীর বাড়ি, লালমনিরহাটের নিদারিয়া মসজিদ, নীলফামারী বড় মসজিদ, কুড়িগ্রাম সদর রকাটাদুয়ার/বাগদুয়ার প্রভৃতি রয়েছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় কার্যাললের আঞ্চলিক এ.কে.এম. সাইফুর রহমান বলেন, রংপুরের তাজহাট জমিমদার বাড়িতে ঈদকে ঘিরে ৪০/৫০ হাজার দর্শনার্থী আসার সম্ভবনা রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব সম্পদকে ঘিরে উত্তরাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভবনা রয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।