ঢাকাশনিবার , ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উদ্যোক্তা
  6. কর্পোরেট
  7. কৃষি ও প্রকৃতি
  8. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. পর্যটন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কুঠিবাড়ির পরতে পরতে বিশ্বকবির ছোঁয়া

Sohel H
মার্চ ১১, ২০২৫ ৫:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রাম শিলাইদহ। প্রমত্তা পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা গ্রামটির পূর্ব নাম খোরশেদপুর। এখানেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ির অবস্থান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনন্য সাহিত্যকর্ম সৃষ্টিতে কুঠিবাড়ির রয়েছে বিশেষ অবদান।

মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আবৃত এই কুঠিবাড়ি এবং পদ্মা নদী ও পদ্মার বুক থেকে বেরিয়ে আসা গড়াই নদীর বুকে রচিত হয়েছে বিশ্বনন্দিত কবির সাহিত্যকর্মের শ্রেষ্ঠাংশ। স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহকে তার ‘যৌবন ও পৌঢ় বয়সের সাহিত্যরস সাধনার তীর্থস্থান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শিলাইদহে বসবাস ও জমিদারি পরিচালনাকালে তিনি তার বিপুল সৃষ্টির দ্বারা বাংলা সাহিত্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে কুষ্টিয়া অঞ্চলের জমিদারি পান। পরে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে আসেন। বন্যার সময় পদ্মার ভাঙনে পুরোনো কুঠিবাড়ির নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এই পুরোনো কুঠিবাড়িটি ভেঙে ফেলা হয় এবং পুরোনো ভবনসামগ্রী দিয়েই নতুন কুঠিবাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ১৯০১ সাল পর্যন্ত তিনি অনিয়মিত বিরতিতে এখানে জমিদারি পরিচালনা করেন। এই কুঠিবাড়ি থেকে তিনি নওগাঁর পতিসর ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের জমিদারি দেখাশোনা করতেন। রবীন্দ্রনাথের অবস্থানকালে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু (আচার্য), দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, লোকেন্দ্রনাথ পালিতসহ তৎকালীন বঙ্গের অনেক খ্যাতনামা বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী শিলাইদহে আসেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে এসে জমিদারির পাশাপাশি মশগুল ছিলেন কাব্য ও সাহিত্য সাধনায়। এই কুঠিবাড়ি ও পদ্মার বুকেই রচিত হয় রবীন্দ্র-সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফসল সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার বেশির ভাগ কবিতাসহ অনেক গল্প, নাটক, উপন্যাস, পত্রাবলী ও গীতিমাল্য। এখানে বসেই কবি গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। যা তাকে এনে দিয়েছে বিশ্বখ্যাতি এবং বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছে সুমহান উচ্চতায়। আর তিনি হয়েছেন বিশ্বকবি। কবি হিসেবেই ১৯১৩ সালে তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়, যা কবিগুরুর পর বাংলা সাহিত্যের আর কোনো কবি-সাহিত্যিকের ভাগ্যে জোটেনি!
১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত আছে। ৩২ বিঘা জায়গা ঘিরে পৌনে চার বিঘা জমির ওপর ঢেউ আকৃতির বেষ্টনী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা বাড়িটির দক্ষিণ দিকে আছে একটি আকর্ষণীয় প্রবেশ তোরণ। তিনতলা বাড়িটির নিচ ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষেই কবি রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষকবন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির রবীন্দ্রনাথের ছবি। বাল্যকাল থেকে মৃত্যুশয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে। তা ছাড়াও রয়েছে শিল্পকর্ম এবং তার ব্যবহার্য আসবাবপত্র। কবিগুরুর ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলোর মধ্যে আছে চঞ্চলা ও চপলা নামের দুটো স্পিডবোট, আট বেহারার পালকি, কাঠের চেয়ার, টি-টেবিল, সোফা সেট, ইজিচেয়ার, পালংক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস।
মনোরম কুঠিবাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য সবুজ বৃক্ষের সমারোহ। কুঠিবাড়ির পশ্চিম দিকে এগোলে দেখা মেলে শান বাঁধানো বকুলতলার পুকুর ঘাট। যেখানে বসে কবিগুরু লিখেছিলেন ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’ গানটি। পুকুর ধারে বসে এই গানটি গেয়ে কবিগুরুর সময়কার আবহ তৈরি করে আপনার ভ্রমণপিপাসু সত্তাকে দিতে পারবেন কবিগুরুর নিবিড় ছোঁয়া- যেন কুঠিবাড়ির পরতে পরতে বিশ্বকবির স্মৃতি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। ভ্রমণপিপাসু যে কেউই মুহূর্তের জন্য ১৯ শতকের শেষদিকে ফিরে যেতে বাধ্য!

যেভাবে যাবেন কুঠিবাড়ি
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস ও ট্রেনযোগে কুষ্টিয়া যাওয়া যায়। বাসে গেলে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ এসবি সুপার ডিলাক্স, শ্যামলী, হানিফ বাসে কুষ্টিয়ার মজমপুর গেটে নেমে যেতে হবে। অন্যদিকে ট্রেনে যেতে চাইলে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা ও বেনাপোল এক্সপ্রেসে যেতে পারবেন। কুষ্টিয়া শহর থেকে অটোরিকশা, সিএনজি, ইজিবাইক ও অন্যান্য বাহনযোগে সহজে এবং কম খরচে কুঠিবাড়ি যাওয়া যায়।

টিকিটের মূল্য ও প্রবেশের সময়সূচি
গ্রীষ্মকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শীতকালে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে প্রতিদিন বেলা ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জাদুঘর সাময়িক বিরতিতে বন্ধ থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘরটি সপ্তাহের প্রতি রবিবার পূর্ণ দিন বন্ধ থাকে এবং সোমবার বেলা ২টা থেকে খোলা থাকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘরের প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৫ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের ৫০ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশি পর্যটকের জন্য টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন
কুষ্টিয়া শহরে মোটামুটি মানের বেশকিছু আবাসিক হোটেল আছে। আপনার পছন্দমতো যেকোনো হোটেল ঠিক করে নিতে পারবেন। একটু ভালো মানের মধ্যে রয়েছে হোটেল রিভার ভিউ, হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনাল। এ ছাড়া মজমপুর ও এনএস রোডে বেশকিছু মধ্যম মানের হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন
খাওয়া-দাওয়ার জন্য বেশকিছু ভালো মানের হোটেল-রেস্টুরেন্ট আছে। কোর্ট স্টেশন এলাকার হোটেল শফিতে খেয়ে দেখতে পারেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর হোটেল, শিল্পী হোটেল, খাওয়া-দাওয়া হোটেলগুলোতে খেতে পারেন। আর কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা ও কুলফি মালাই অবশ্যই খাবেন।

কুষ্টিয়া জেলার আরও দর্শনীয় স্থান
কুষ্টিয়া জেলার দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে অন্যতম হলো- ফকির লালন সাঁইজির মাজার, মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা, লালন শাহ সেতু, জিউর মন্দির ইত্যাদি।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।