ব্যাংকগুলো কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতে আগামী পাঁচ বছরে কত পরিমাণ ঋণ দেবে, তার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই ছোট উদ্যোক্তারা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। শুধু ব্যবসা সংক্রান্ত সনদ থাকলেই এই ঋণ পাওয়া যাবে।
সোমবার (১৭ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আমির উদ্দিন, সিএমএসএমই বিভাগের পরিচালক নওশাদ মুস্তফা, সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নতুন নীতিমালায় ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা’ শ্রেণি যুক্ত
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা’ নামে একটি নতুন শ্রেণি যুক্ত করা হয়েছে। এতে শ্রমনির্ভর অতিক্ষুদ্র বা ভাসমান উদ্যোক্তা বা সেবাপ্রদানকারীরা অন্তর্ভুক্ত হবেন। এদের ইউনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন (ইউবিআইডি), ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিফিকেশন (ডিবিআইডি) বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আওতায় পার্সোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট (পিআরএ) থাকতে হবে।
উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা এই তিন খাতের অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তারা, যাদের জনবল ১০ জনের বেশি নয়, তারা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। তবে তাদের জমি ও কারখানা ভবন ব্যতীত প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৫ লাখ টাকার কম হতে হবে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা
২০২৯ সালের মধ্যে ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতির ২৭ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে দিতে হবে, যার মধ্যে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তারা পাবেন। নতুন নীতিমালায় ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণের পুনঃঅর্থায়নের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
মাঝারি উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা ঋণ
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। তৈরি পোশাক শিল্পে ১২১-৩০০ কর্মী বা শ্রমঘন শিল্পে ১,০০০ কর্মী থাকলে এই ঋণ পাওয়া যাবে। সেবা খাতের মাঝারি শিল্পে সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হবে, যেখানে কর্মীর সংখ্যা ৫১-১২০ জন।
অন্যান্য ঋণসীমা:
- মাইক্রো শিল্প: সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা
- ক্ষুদ্র শিল্প: ২৫ কোটি টাকা
- মাঝারি শিল্পের ট্রেডিং খাত: ১০ কোটি টাকা
- ক্ষুদ্র শিল্পের ট্রেডিং ও সেবা খাত: ৮ কোটি টাকা
- মাইক্রো শিল্পের ট্রেডিং খাত: ৭৫ লাখ টাকা
- কুটিরশিল্প: ২০ লাখ টাকা
ঋণের মেয়াদ ও সুবিধা বৃদ্ধি
নতুন নীতিমালায় সিএমএসএমই মেয়াদি ঋণের মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। ৫ বছরের বেশি মেয়াদি প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্যাংক গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে ৬ থেকে ১২ মাস গ্রেস পিরিয়ড দিতে পারবে।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি চার্জও মুক্ত রাখা হয়েছে, যা উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এই নীতিমালার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পেতে সুবিধা পাবেন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হবে।