প্রত্যেক মুমিনের জীবনের মূল লক্ষ্য হলো আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই মহৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আমাদের প্রতিটি দিন যেন আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণে কাটে। দিনের শুরুটা যদি আল্লাহর স্মরণে ও তাঁর ভালোবাসার পথে হয়, তবে পুরো দিনটিই রহমত ও বরকতে ভরে ওঠে। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর উম্মতদের জন্য এমন কিছু সহজ অথচ অত্যন্ত কার্যকরী আমল শিখিয়ে গেছেন, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অসাধারণ মাধ্যম।
১. ফজরের পর জিকির ও তাসবিহ
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ১০০ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি’ পড়বে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উত্তম আমল নিয়ে কেউ আসতে পারবে না, তবে সে ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে বেশি আমল করেছে।’ (মুসলিম, ২৬৯২)
এই তাসবিহের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। দিনে মাত্র কয়েক মিনিটের এই জিকির আপনার আমলনামাকে ভারী করে তুলবে।
বাংলা উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি
অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।
২. সকল অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার দোয়া
প্রতিটি সকাল আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু বিপদও নিয়ে আসতে পারে। তাই আল্লাহর কাছে সুরক্ষা চাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! গত রাতে একটি বিচ্ছু কামড় দেওয়ায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।’ তখন তিনি রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি যদি সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পড়তে, তবে তোমার কোনো ক্ষতি হতো না: ‘আউজু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্ব।’(মুসলিম, ২৭০৯)। এই দোয়াটি শুধু সন্ধ্যায় নয়, সকালে পড়লেও সব ধরনের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
বাংলা উচ্চারণ: আউজু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্বা।
অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায় আমি তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।
৩. সকালের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল
ফজরের নামাজের পর কিছু নির্দিষ্ট আমল রয়েছে, যা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে দারুণভাবে সাহায্য করে।
আয়াতুল কুরসি: প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে জান্নাতে প্রবেশে একমাত্র বাধা থাকে মৃত্যু। (শুআবুল ঈমান, ২৩৯৫)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া: সকাল-সন্ধ্যা তিনবার ‘রাজিতু বিল্লাহি রব্বাওঁ ওয়াবিল ইসলামী দ্বিনাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা’ পাঠ করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন। (তিরমিজি, ৩৩৮৯)
সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পড়ে এবং ওই দিন বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। (বুখারি, ৬৩০৬)
জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া: ফজর ও মাগরিবের পর সাতবার ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার’ (হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন) পাঠ করলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। (আবু দাউদ, ৫০৭৯)
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত করার চেষ্টা একজন মুমিনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। দিনের শুরুতে এই সহজ আমলগুলো পালন করলে আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর অপার রহমত লাভ করা সম্ভব। আসুন, আমরা সবাই এই সুন্নাতগুলো অনুসরণ করে আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।