ঢাকাশুক্রবার , ২০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উদ্যোক্তা
  6. কর্পোরেট
  7. কৃষি ও প্রকৃতি
  8. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. পর্যটন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রতিকূলতা জয় করে বিজ্ঞানে অমর ম্যারি কুরি

Md Abu Bakar Siddique
জুন ৫, ২০২৫ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ফ্রান্সের এক ঠাণ্ডা শীতের সকাল। প্যারিসের ইকোল সুপেরিওর দে ফিজিকের এক ছোট্ট টিনশেড ঘরে তখন শোঁ শোঁ করে ঢুকছে হিমেল বাতাস। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যন্ত্রপাতি, ফ্লাস্ক আর কাচের সিলিন্ডার। টিনশেডের ওয়ার্কশপে এক রাসায়নিকের ওপর মনোযোগী এক নারী। নাম ম্যারি কুরি। বিজ্ঞানমনস্ক এই নারীর জীবনকাহিনি কেবল গবেষণার গল্প নয়, তা সংগ্রামেরও ইতিহাস।

বিজ্ঞানের ইতিহাসে ম্যারি কুরি এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি কেবল প্রথম নারী হিসেবে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার জয় করেননি, পরবর্তী সময়ে রসায়নেও নোবেল জয় করে গড়েন অনন্য নজির। ম্যারি কুরি এমন এক নারী, যিনি তার স্বামী পিয়েরে কুরির সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম নোবেল জিতেছিলেন। তার কন্যা আইরিন কুরিও পরে নোবেল পুরস্কার পান। তার জীবন ছিল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামের এক উপাখ্যান, যা আজও অগণিত মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়।

নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরি ও ম্যারি কুরি। ছবি: সংগৃহীত

পোল্যান্ডের ওয়ারশ শহরে ১৮৬৭ সালে রুশ শাসনের অধীনে জন্ম হয় মারিয়া সালোমিয়া স্কেলাদস্কার, যিনি পরে ম্যারি কুরি নামে পরিচিত হন। ম্যারির ডাকনাম ছিল মানিয়া। পরিবারে পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। মাত্র ৯ বছর বয়সে বড় বোনকে হারান এবং ১১ বছর বয়সে মাকে। এই শোক ও প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠা ম্যারি পড়াশোনার মাঝে খুঁজে নিতেন সান্ত্বনা ও শক্তি।

অসুস্থতা ছিল তার জীবনসঙ্গী। অপুষ্টিজনিত দুর্বলতায় ১৫ বছর বয়সে একবার জ্ঞান হারান। তখন বড় বোন ব্রনিয়া তাকে নিজের কাছে এনে যত্নে সুস্থ করে তোলেন। মানিয়া সব সময় পড়ালেখায় মগ্ন ছিলেন। বইয়ে ডুবে থেকে নিজেকে পুনরুদ্ধার করেছেন বারবার।

তৎকালীন পোল্যান্ডে নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই ১৮৯১ সালে বড় বোনের অনুপ্রেরণায় মানিয়া পাড়ি জমান প্যারিসে। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব প্যারিসে (সরবোন) ভর্তি হন পদার্থবিদ্যায়। সীমাহীন আর্থিক কষ্ট ও কঠোর অধ্যবসায়ের মধ্যে তিনি পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে দ্য সিটি অব প্যারিস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিজিকস অ্যান্ড কেমিস্ট্রি হায়ার এডুকেশন ইনস্টিটিউটে ডক্টরাল স্কলার হিসেবে বৃত্তি পান।

তার ইস্পাতে চৌম্বকত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার কথা থাকলেও এতে তেমন আগ্রহ ছিল না। তিনি তখন ইউরোপের বিজ্ঞান বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেন। জেনেছেন উইলহেলম রন্টজেনের এক্স-রে আবিষ্কারের খবর। সে সময় রন্টজেন তার স্ত্রীর হাতের আংটিসহ একটি এক্স-রে ফিল্ম প্রচার করে পপ সংস্কৃতিতেও নিজের স্থান করে নেন। তবে পরমাণুর গঠন নিয়ে যে গবেষণা চলছিল আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ও হেনরি বেকেরেলের গবেষণাগারে, তা মানিয়াকে আকৃষ্ট করে। তিনি বেকেরেলের ইউরেনিয়াম থেকে নির্গত রশ্মি আবিষ্কারে চমকিত হন এবং এ বিষয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন।

প্যারিসে তার পরিচয় হয় বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরির সঙ্গে, যিনি পরে তার জীবনসঙ্গী হন। এই দম্পতি একসঙ্গে শুরু করেন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা। উনিশ শতকের শেষদিকে পরমাণুর গঠন নিয়ে নানা মতের উদ্ভব হয়। এই বিতর্কের ভেতর ১৮৯৮ সালে ম্যারি কুরি দাবি করেন, পরমাণুর ভেতরে পরিবর্তন ঘটছে। বেকেরেলের ধারণা পরিমার্জন করে ম্যারি বলেন, কেবল ইউরেনিয়াম থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পারমাণবিক রশ্মি নির্গত হয় না, অন্যান্য পরমাণু থেকেও তা হতে পারে।

তিনি বেকেরেলের ইউরেনিয়াম রশ্মির নাম পরিবর্তন করে একে ‘রেডিওঅ্যাকটিভ রেডিয়েশন’ বলেন। ম্যারি কুরি প্রথম ‘রেডিওঅ্যাকটিভিটি’ বা তেজস্ক্রিয়তা শব্দটি ব্যবহার করেন। প্রায় একই সময়ে রাদারফোর্ড বলেন, রেডিওঅ্যাকটিভ পরমাণু বিকিরণের পর নিজেই রূপান্তরিত হয়। ম্যারি কুরি ও রাদারফোর্ডের এই ধারণা ছিল সাহসী ও যুগান্তকারী। তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, পরমাণুর অভ্যন্তরে পরিবর্তন ঘটছে, যা ছিল তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত ধারণার পরিপন্থি।

ম্যারি ১৯০০ সালে আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা কংগ্রেসে বলেন, ‘দ্য স্পন্টেনিটি অব রেডিয়েশন ইজ অ্যান এনিগমা, আ সাবজেক্ট অব প্রোফাউন্ড অ্যাস্টোনিশমেন্ট।’ অর্থাৎ পরমাণুর স্বতঃস্ফূর্ত বিকিরণ অবাক করা এক রহস্য। পদার্থের এই বিস্ময়কর গুণের পেছনের কারণ তাকে জানতেই হবে।

তিনি বিস্তর পড়াশোনার মাধ্যমে জানতে পারেন, ১৪ শতকে চেক-জার্মান সীমান্তে রুপার খনিতে ‘পিচব্লেন্ড’ নামের একটি খনিজ পাওয়া গেছে। সে খনিজে ইউরেনিয়াম রয়েছে বলে ধারণা করা হতো। ম্যারি কুরি বোহেমিয়া থেকে প্রায় ৫ হাজার কেজি পিচব্লেন্ড নিয়ে এলেন নিজ গবেষণাগারে। তিনি ও পিয়েরে কুরি এই খনিজ থেকে ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য পারমাণবিক পদার্থ আলাদা করার কাজে লেগে পড়েন। এতে তারা ‘ফ্র্যাকশনাল ক্রিস্টালাইজেশন’ নামক এক নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে রেডিয়াম আলাদা করতে সক্ষম হন। এই পারমাণবিক পদার্থ পর্যায় সারণিতে ৮৮ নম্বর উপাদান হিসেবে যুক্ত হয়। এই আবিষ্কার পারমাণবিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

১৯০৩ সালে ম্যারি কুরি, পিয়েরে কুরি ও হেনরি বেকেরেল তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ম্যারি তার পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন। এটি ছিল নারী বিজ্ঞানীদের জন্য এক অসাধারণ অনুপ্রেরণা।

পরে ১৯১১ সালে রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কার এবং রেডিয়ামের বিশুদ্ধীকরণ ও বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের জন্য তিনি এককভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। এই মহীয়সী বিজ্ঞানী ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি দুটি ভিন্ন বিজ্ঞানে নোবেল পান এবং একমাত্র মা, যার কন্যা আইরিন কুরিও পরবর্তী সময়ে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

সাফল্যের পাশাপাশি তার জীবনে নেমে আসে গভীর শোক। ১৯০৬ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী পিয়েরে কুরির মৃত্যু হয়। স্বামীকে হারানোর পরও তিনি গবেষণার কাজ এবং দুই কন্যার প্রতিপালন নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যান। তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে দীর্ঘসময় কাজ করার ফলে তার স্বাস্থ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার পরও থেমে যাননি তিনি। ম্যারি কুরি বিশ্বাস করতেন, পরমাণুর গভীর রহস্য বিজ্ঞানের এক অমীমাংসিত ধাঁধা।

ম্যারি কুরির জীবন কেবল বৈজ্ঞানিক সাফল্যের কাহিনি নয়, বরং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থেকে অদম্য ইচ্ছা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জ্ঞানার্জন যে মানুষকে শোক ও হতাশা থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং কোনো বাধাই যে অদম্য সাহসের কাছে হার মানে, ম্যারি কুরির জীবন তারই এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।