ঢাকাশুক্রবার , ২০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উদ্যোক্তা
  6. কর্পোরেট
  7. কৃষি ও প্রকৃতি
  8. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. পর্যটন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ফেলনা জিনিসের পণ্য রপ্তানি করে সাফল্য রহমতুল ইসলামের

Md Abu Bakar Siddique
জুন ১৭, ২০২৫ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

কয়েক বছর আগেও পেঁপেগাছের ডালপালা বা নল ছিল ফেলনা। কাঁচা বা পাকা পেঁপে সংগ্রহের পর ছেঁটে দেওয়া ডালপালা পড়ে থাকত বাগানে। ফেলে দেওয়া এই ডাল এখন মূল্যবান রপ্তানি পণ্য। শুধু পেঁপের নলই নয়, আমগাছ ও নিমগাছের ফেলে দেওয়া চিকন ডাল, পাটচুন ঘাস, নীলকণ্ঠ ফুলের মতো ফেলনা জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা। এসব বিশেষায়িত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও।

ফেলনা জিনিসকে রপ্তানি পণ্য বানানোর পথ দেখিয়েছেন দেশেরই একজন উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তা হলেন রহমতুল ইসলাম। পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির জন্য মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রাম জাগলায় কারখানা গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে এসব পণ্য তৈরি করছেন গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা। বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড নামের এই কারখানায় প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০০ জনের।

গ্রামের এই ব্যতিক্রমী কারখানা দেখতে নিয়মিতই আসছেন বিদেশি ক্রেতারা। সংখ্যা কত হবে? রহমতুল ইসলাম জানালেন, গত আট বছরে কারখানা দেখতে আসা বিদেশি প্রতিনিধিদলের সংখ্যা চার শ জনের কম হবে না। মুঠোফোনে কথা বলার সময় তিনি জানালেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদল এখন তাঁর কারখানা ঘুরে দেখছে।

যেভাবে শুরু

মাগুরার সন্তান রহমতুল ইসলাম উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা শুরু করেন। একসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপানে থিতু হন। তবে নিজের এলাকায় ব্যতিক্রমী কিছু করার তাড়না থেকে যায়। শুরুতে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। এরপর দেশে ফিরে ২০১৮ সালে মাগুরার জাগলা গ্রামে চার–পাঁচজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন। পোষা প্রাণীর দুই ধরনের খেলনা তৈরির মাধ্যমে শুরু হয় কারখানার কর্মযজ্ঞ। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে জাপানে প্রথমবারের মতো তিন হাজার মার্কিন ডলারের পোষা প্রাণীর খেলনা রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।

চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধীরে ধীরে রপ্তানিও বাড়তে থাকে। প্রয়োজন পড়ে নতুন কর্মীর। কিন্ত তাঁদের দক্ষ করে তোলার জন্য দরকার প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয় কারখানায়। কর্মী হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের। কর্মযজ্ঞ বৃদ্ধির পর জাপান ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে এই কারখানায়। প্রায় ২০ একর জমিতে কারখানার পাশাপাশি খাবার ও খেলনা তৈরির কাঁচামালের জন্য ঘাস ও গাছ রোপণ করেন তিনি। চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এখন কাঁচামাল সরবরাহের জন্য প্রচারণাও শুরু করেছেন। ফেলনা জিনিস এনে বিক্রি করলেই নগদ টাকা দেওয়া হয়। এমন উদ্যোগে গ্রামের লোকজন ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন কারখানায়। এমন সরবরাহকারীর সংখ্যাও এখন প্রায় ১০০।

 পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।
পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

কারখানার অন্যতম কাঁচামাল পেঁপেগাছের ডালের চাহিদা এত বেশি যে ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের ভাষায় পেঁপের ডাল সংগ্রহের আহ্বান জানিয়ে রেখেছে বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। তাদের ফেসবুক পেজে হাইলাইটেড করা একটা পোস্টের ভাষা হচ্ছে এমনই, ‘আপনার কি পেঁপের চাষ আছে অথবা জানামতে কেউ কি পেঁপের চাষ করে? কোনো কাজে লাগে না এই সবুজ পেঁপের নল থেকে ক্যাশ টাকা উপার্জন করতে পারেন…যেকোনো পরিমাণ এই কাঁচা পেঁপের নল আমরা ক্যাশ টাকা দিয়ে কিনে নিব।’

রহমতুল ইসলাম গ্রামে এই কারখানা এমনভাবে গড়ে তুলেছেন, যাতে এই কারখানার জন্য কোনো কাঁচামালই বিদেশ থেকে আমদানি করতে না হয়। পেঁপেগাছের ডাল, নিমগাছ কিংবা আমগাছের ডাল, ঘাস—সবই দেশে রয়েছে। আবার কারখানায় কোনো বর্জ্যও নেই। কীভাবে সম্ভব হয়েছে, তা জানতে চাইলে এই উদ্যোক্তা বলেন, কারখানা এলাকায় উৎপাদিত ঘাস, গাছের চিকন ডাল ব্যবহারের পাশাপাশি সংগ্রহ করা হয় ফেলনা জিনিস। এসব ফেলনা প্রক্রিয়াজাত করে খেলনা ও খাবার তৈরি হয়। খেলনা ও খাবার তৈরির পর ঘাস ও গাছের নরম ডাল গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়।

 পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।
পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

ফেলনা থেকে খেলনা ও খাবারের ৩৫০ পণ্য

কারখানার কর্মকর্তারা জানান, কারখানায় চারটি অংশ রয়েছে। একটিতে পোষা প্রাণীর পোশাক, একটিতে কুকুর–বিড়ালের খেলনা তৈরি হয়। তৃতীয় অংশে তৈরি হয় পোষা প্রাণীর খাবার ও স্ন্যাকস। এ ছাড়া ঘাসের কারখানায় খরগোশ, গিনিপিগ ও ইঁদুরের খেলনা ও খাবার তৈরি হয়। কর্মকর্তারা আরও জানান, পেঁপের নল প্রক্রিয়াজাত করে খরগোশ, গিনিপিগ ও হ্যামস্টারের খাবার তৈরি হয়। পোষা কুকুরের দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয় নিমের ডাল। কুকুর এই ডাল চিবিয়ে ফেলে দেয়। তাতে দাঁত পরিষ্কার হয়ে যায়। ঘাস দিয়ে তৈরি করা ইঁদুরের ঘর যাচ্ছে কানাডায়।

কারখানার ব্যবস্থাপক মুন্সী তোহা হাসান প্রথম আলোকে জানান, এখন পর্যন্ত পোষা প্রাণীর ৩৫০ রকমের খাবার ও খেলনা তৈরি করেছেন তাঁরা। নিয়মিত এই সংখ্যা বাড়ছে।

 পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।
পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

আসছে বৈদেশিক মুদ্রা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে কোম্পানিটি সাড়ে ৪ লাখ ডলারের (প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা) পণ্য রপ্তানি করেছে। ২০১৮ সাল থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিটি সব মিলিয়ে ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এখন পর্যন্ত জাপানেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে কোম্পানির পণ্য। এরপর দ্বিতীয় বড় ক্রেতাদেশ কানাডা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও রপ্তানি হচ্ছে এসব পণ্য।

শুধু বৈদেশিক মুদ্রা আয় নয়, কারখানায় চাকরি করে সুদিন ফিরেছে সেলিনা, মুন্নী, রানিকার মতো অনেকের। চাকরির টাকা জমিয়ে কেউ ঘর বানিয়েছেন, কেউ গরু–ছাগল কিনে বাড়তি আয়ের পথ খুলেছেন। আবার কারখানায় পেঁপের নল, গাছের কচি ডাল সরবরাহ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শামসুজ্জামান লিটন, ইমরানের মতো অনেকেই। শামসুজ্জামান লিটন জানান, পেঁপের ডাল বাগানে পড়ে থাকত। এখন সেটা মূল্যবান হয়ে গেছে। বোল্ড পার্টনারসের উদ্যোগ দেখিয়ে দিয়েছে, ফেলনা জিনিসও দামি হতে পারে।

 পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।
পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

গ্রামে কর্মসংস্থান

বৈশ্বিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে পোষা প্রাণীর খাবার, পোশাক ও খেলনার বাজার প্রায় ১৪৩ বিলিয়ন ডলারের। এই বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। বিশাল বাজারের কথা উল্লেখ করে রহমতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পোষা প্রাণীর পোশাক থেকে শুরু করে খাবার, খেলনার বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। তৈরি পোশাকের বাইরে এই খাতে নজর দেওয়া গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। আবার পোষা প্রাণীর খাবার, পোশাক বা খেলনার জন্য গ্রামে গ্রামে কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। কাঁচামালও দেশে আছে। এতে মূল্য সংযোজন হবে শতভাগ। আবার গ্রামেও কর্মসংস্থান ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।