আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মদিন। আমাদের মহান স্বাধীনতার মূল আলোকবর্তিকা ছিলেন এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষটি। দিবসটি জাতীয় ছুটির দিন। বঙ্গবন্ধুকে পরম শ্রদ্ধায় দিনটি পালিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফুর রহমান ও সায়েরা খাতুনের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর পিতা ছিলেন সে সময়কার নামকরা রাজনীতিবিদ, যিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা বাড়িতেই লাভ করেন এবং পরে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল এবং কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি একজন মেধাবী ছাত্র এবং অত্যন্ত প্রতিভাধর বক্তা ছিলেন, যে কারণে তাঁকে সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর নামানুসারে ‘বোস’ নামে ডাকা হতো।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৪০-এর দশকে যখন তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশনে যোগ দেন। পরে তিনি মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হন, যেটি ভারতে একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের জন্য লড়াই করছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সদস্য হন। ১৯৫০-এর দশকে, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং পূর্ব পাকিস্তানিদের অধিকারের জন্য শক্তিশালী ও আপোষহীন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রনীতির একজন সোচ্চার সমালোচক ছিলেন, তিনি পূর্ব পাকিস্তানিদের প্রতি বৈষম্য অনুভব করতেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ গঠন করেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন ও অধিকারের পক্ষে ছিল। দলের স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’ যা পরে বাঙালির জন্য প্রাণের স্লোগান হয়ে ওঠে।
১৯৬০-এর দশকে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ৬৯ এর গণআন্দোল দমাতে পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক আইন জারি করে এবং পূর্ব পাকিস্তানে দমন-পীড়ন চালায়। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে।
এই বিজয়ের পর পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের ম্যান্ডেটকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মঘট ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে এক নৃশংস সামরিক অভিযানের মাধ্যমে নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। এর আগেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় এবং বাঙালি জনগণ বীরত্বের সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ লোক নিহত হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করে এবং যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়।
বাংলাদেশের জন্মে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও দূরদৃষ্টি ছিল প্রধান সহায়ক। বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন ছিলেন। তিনি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং দরিদ্র ও প্রান্তিকদের উন্নয়নে আমৃত্যু অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।