জান্নাতুল মিশু পেশায় শিক্ষক, উদ্যোক্তা ও স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা। কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলায় জন্ম নেয়া এই তরুণী কাজের সূত্রে এখন একই জেলার ভৈরব উপজেলায় বসবাসরত৷
পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে। শিক্ষকতা করে চলছিল মিশু ও তার পরিবারের জীবন। মিশু তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বিপত্তি বাঁধলো ২০২০ সালে কোভিডের কারণে তার কর্মস্থল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।কোভিডকালে কাজবিহীন হয়ে ঘরবন্দি হয়ে মিশু সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের ঘরে বসে কাজ করার বিভিন্ন পোস্ট দেখতেন, সেখান থেকেই ভাবনা যে অন্যরা করতে পারলে আমিও পারবো। জীবিকার তাগিদে নিজের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে হ্যান্ডমেইড জুয়েলারি নিয়ে কাজ শুর করলেও ধীরে ধীরে অন্য পণ্য সংযোজন করেন। শুরুতে ব্যবসায়িক জ্ঞান ও বিনিয়োগের স্বল্পতা ছিল এবং ব্যবসা নিয়ে কোন রকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না বলে কাজ করতে তার সমস্যায় পরতে হয়।
তার ব্যবসায়িক উদ্যোগের নাম: মুনিয়াত, যার অর্থ ইচ্ছে। ব্যবসায়ের ট্যাগলাইন ‘ইচ্ছেগুলো পূর্ণতা পাক’। অন্যদের ইচ্ছেগুলো তার উদ্যোগ মুনিয়াতের মাধ্যমে পূর্ণ হউক তাই চান তিনি। মুনিয়াত একটি সৃজনশীল উদ্যোগ, যেখানে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হয়। তার লক্ষ্য হচ্ছে, দেশীয় ঐতিহ্য ও আধুনিক ফ্যাশনের মিশ্রণ, যা সবার কাছে ভালোবাসা ও সৃজনশীলতা পৌঁছে দিবে। পোশাক, জুয়েলারি, খাঁটি নারকেল তেল, হোম ডেকর আইটেম, ক্রাফট আইটেম ইত্যাদি নিজস্ব ক্রিয়েশনের পাশাপাশি দেশীয় তাঁতের বিভিন্ন পোশাকের কালেকশনও রয়েছে তার এখানে।
মুনিয়াতের বর্তমান টিম মেম্বার ৫ জন। ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেওয়ার ফলে বিপদের সময় মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে হয়নি, যেহেতু তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার এই উদ্যোগ তাকে ও তার পরিবারকে সাহায্য করেছিলো।
মিশু বলেন, ভবিষ্যতে মুনিয়াতকে আমরা আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, দেশীয় ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা – যাতে বাংলাদেশের গামছা, তাঁতের তৈরি পোষাক, মাটির কাজ, পাটের শিল্প এসবের সৌন্দর্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হয়।
তিনি আরও বলেন “আমরা চাচ্ছি মুনিয়াতের নিজস্ব শোরুম তৈরি করতে, যেখানে হাতের কাজের পণ্যগুলো এক ছাদের নিচে দেখা যাবে। পাশাপাশি, নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নে কাজ করতে চাই, যাতে আরও অনেক তরুণী নিজেদের সৃজনশীলতা দিয়ে স্বপ্ন গড়তে পারে। আরো বেশি প্রাকৃতিক এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করা, সাস্টেইনেবল ফ্যাশনের দিকে এগিয়ে যাওয়া, আর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে মুনিয়াতের পরিচিতি তৈরি করাই আমাদের বড় স্বপ্ন।