ঢাকাশুক্রবার , ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উদ্যোক্তা
  6. কর্পোরেট
  7. কৃষি ও প্রকৃতি
  8. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. পর্যটন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রমজান মুমিনদের জন্য আত্মগঠনের সেরা মাস

Sohel H
মার্চ ২৭, ২০২৩ ২:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মাহমুদ আহমদ
ভরমজান মাস সিয়াম সাধনা ও তাকওয়ার মাস, কল্যাণ ও বরকতের মাস, রহমত ও মাগফিরাত এবং জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তি লাভের মাস। মহান আল্লাহ এ মাসটিকে বহু ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন। মাহে রমজান মুমিনদের আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য এক অনন্য সেরা মাস। এ মাসের একটি ফরজ ইবাদাত অন্য মাসের ৭০টি ফরজ ইবাদাতের সমান। রমজান মাস আমাদের জন্য বার্ষিক প্রশিক্ষণের মাস। এ মাসে আছে সাহরি, ইফতার, তারাবিহ, ইতিকাফ, লইলাতুল কদর, ফিতরা ও ঈদুল ফিতর। কুরআন নাজিল হয়েছে এ মাসের লাইলাতুল কদরে, সংঘটিত হয়েছে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদর ও বিজয় হয়েছে পবিত্র মক্কা। কাজেই আত্মগঠন ও বিজয়ের মাস রমজান। মাহে রমজান ইসলামের আদর্শকে সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছানোর এক সুবর্ণ সুযোগ। দীর্ঘ ১১টি মাস অতিক্রম করে প্রতি বছর এ পবিত্র মাস মুসলিম উম্মাহর কাছে হাজির হয় অজস্র-অফুরন্ত রহমত ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে। মুসলিম মিল্লাতের জন্য রহমতস্বরূপ এ মাসটি আত্মগঠন, নৈতিক উন্নতি, চারিত্রিক দৃঢ়তা, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর সমাজ গঠন এবং সামাজিক সাম্যের নিশ্চয়তা বিধানের এক অনন্য সুযোগ।
সিয়াম হল ফজরের উদয়লগ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়্যতসহ পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা। রমজান মাসের রোজাকে ফরজ করে যে আয়াত নাযিল হয়? তাতে আল্লাহ্ রোজার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্দেশ করেছেন : সিয়াম পালন তথা রোজা ফরজ এবং এটি ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমদের ওপর রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৩)
‘‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে।’’ (সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫)
রমজান মাসের মাহাত্ম্য : এ মাসের মাধ্যমে সম্ভব দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ সাধন করা । অতি মহিমান্বিত ও পবিত্র মাস : মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি; সৃষ্টির সাথে সাথে সত্য প্রদর্শনের জন্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের মাধ্যমে তিনি তার দিকনির্দেশনা বা বিধানও পাঠিয়েছেন যা ‘গাইডবুক’ হিসেবে অভিহিত। মহাগ্রন্থ ‘আল কোরআন’ তেমনি এক গাইডবুক। এ কোরআন পবিত্র রমজান মাসে নাজিল হয়েছে। অন্য সকল আসমানী কিতাবও এ পবিত্র মাসে নাজিল হয়। আল্লামা ইবনে কাছির বলেন “এটা সেই মাস যে মাসে নবীগণের ওপর আল্লাহর কিতাবসমূহ নাজিল করা হয়েছে।” অতএব, রমজান মাস শুধু কোরআন নাজিলের মাস নয়; সকল আসমানী কিতাব নাজিলেরও মাস। এ মাসেরই ৬ তারিখে মুসা (আ:) এর ওপর তাওরাত, ১৮ তারিখে দাউদ (আ:) এর ওপর যবুর, ১৩ তারিখে ঈসা (আ:) এর উপর ইনযিল এবং শেষ ১০ দিনের কোন এক বিজোড় রাতে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। কোরআন নাযিলের এ রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ বা ‘কদরের রাত’ বলা হয়। শুধু তাই নয় এ মাসের ২য় হিজরির ১৭ই রমজান বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং মুসলমানরা বিজয়ী হয়, ৮ম হিজরির ২০ শে রমজান মক্কা বিজয় হয়, রমজানের প্রথম রাত্রি হযরত ইবরাহিম আ:-এর ওপর সহিফা নাজিল হয়, ১৩ই রমজান আমর বিন আসের নেতৃত্বে জেরুসালেম জিয় হয়, রমজান মাসেই হযরত সুমাইয়া নির্মমভাবে শহীদ হন, ৯২ হিজরিতে রমজান মাসেই তারেক বিন জিয়াদ কর্তৃক স্পেন বিজয় হয়, রমজান মাসে মুসলমানদের পবিত্রস্থান বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয় হয়। আর এ কারণে মাসটি অতি মহিমান্বিত।
নৈতিক শুদ্ধতার প্রশিক্ষণ : খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা এবং আরো কিছু দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে মানুষের দৈহিক কামনা-বাসনা অনেক সময় মাথা-চাড়া দিয়ে ওঠে। অনেক সময় সে উচ্ছৃংখল হয়ে ওঠে। মানুষের এই মৌলিক চাহিদাগুলোর অপব্যবহারের ফলে লাগামহীন ঘোড়ার মতো সমাজে অন্যায়, ব্যভিচার, এবং অসৎ কার্যকলাপের সূচি দীর্ঘ হয়। পানাহার ছাড়া মানুষ যেহেতু বাঁচতে পারে না, তাই কঠিন ক্ষুধার সময় তার যে কষ্ট অনুভব হয় তা সহ্য করার মাধ্যমে সে ধৈর্যশীল ব্যক্তিতে পরিণত হয়। এর ফলে অন্য যে কোন কঠিন পরিস্থিতি ধৈর্যের সাথে সে মোকাবেলা করতে পারে। আর এর প্রশিক্ষণ পায় সে এ রমজান মাসে। তাইতো হাদিসে বলা হয়েছে, এ মাস হলো ধৈর্যের মাস, এ ধৈর্যের বিনিময় হলো জান্নাত। সমাজ হতে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরা অনাহারে থেকে যে কষ্ট পায়, অনাহারীর সে ক্ষুধার জ্বালা রোজার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। এতে করে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের প্রতি অনুকম্পা ও সহমর্মিতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। সমবেদনায় সিক্ত হয়ে তাদের প্রতি অনেকের সাহায্যের হাত প্রসারিত হয়। ধনীদের মধ্যে সমাজের দরিদ্রতা বিমোচনে ভূমিকা পালন করার অনুভূতি জাগ্রত হয়। এ রোজা একজন ব্যক্তির ওপর অনেকগুলো আচরণগত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। মিথ্যা বলা, পরনিন্দা, ধোঁকা দেয়া, প্রতারণা, হিংসা-বিদ্বেষ, অশ্লীল কথা ও কাজ এ সবকিছুই এমনিতেই নিষেধ। কিন্তু রোজা পালনকালে এগুলো বর্জনের চর্চা হয় অনেক বেশি। রমজান মাসের এ চর্চা পরবর্তী এগারোটি মাস পালন করা হলে সুন্দর, সুশৃংখল ও পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়ে ওঠা সহজেই সম্ভব।
এতসবের পরও পরকালের সফলতার জন্য রমযান মাস একটি দুর্লভ মাস। এ মাসে একটি সন্মানিত রাত্রির সুসংবাদ রয়েছে। আর তা হলো ‘লাইলাতুল কদর’ যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম একটি রাত্রি। হাদীসে বলা হয়েছে, এ মাসের প্রথম দশক রহমতের, মধ্য দশক মাগফিরাতের ও শেষ দশক জাহান্নাম থেকে নাজাতের। এ মাসে নফল ইবাদতে অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য সওয়াব রয়েছে। একটি নফল আদায়ে অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমান সওয়াব রয়েছে (মেশকাত)
নৈতিক কল্যাণ সাধনে রমযানের রোয়া উপকারী।
রমযান ও বিজ্ঞান : মুসলমান পরিবারের সন্তানরা রোযা রাখতে অভ্যস্ত হয় ছোট বেলা থেকেই। অনেক মা সুস্থ সন্তানকে দুর্বলতার আশঙ্কায় রোজা রাখতে বারণ করেন। আবার অনেকে পড়াশুনার জন্য রোযা ছেড়ে দেন। মনে রাখা প্রয়োজন ইসলাম একটি সহজ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবন পদ্ধতি। এখানে অকল্যাণকর, অপ্রয়োজনীয়, ধ্বংসাত্মক কোন বিধান নেই। যিনি এমন সুন্দর পদ্ধতি দিয়েছেন তিনি সবকিছু বুঝেই দিয়েছেন। ডা: বেন কিম ঋধংঃরহম ভড়ৎ ঐবধষঃয গ্রন্থে বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপবাসকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, অনেক দিনের মাথা ব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, বয়সজনিত ডায়েবেটিস ইত্যাদি। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান সিয়াম পালনকে এক বাক্যে উপকারী হিসেবে রায় প্রদান করা হয়েছে।
রমজানের তাৎপর্য : মুমিন বান্দার জীবনে বছরের মধ্যে রমজান মাসটিই এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয়। রমজান আমল করার মাস, এর প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ অনুগ্রহ লাভের বিরাট সুযোগ। রমজান মাসে বান্দাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে অনেক নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। রোজাদারের মর্যাদা উল্লেখ করে হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘রোজাদারের নিদ্রা ইবাদতের সমতুল্য, তার চুপ থাকা তসবিহ পাঠের সমতুল্য, সে সামান্য ইবাদতে অন্য সময় অপেক্ষা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী হয়। নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যারা রমজান মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা পালন করেছে, তারা ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপরূপে প্রসব করেছিলেন।’
হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের বিশ্বাসে রমজানের রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি রমজানের রাত্রি জাগরণ করে ইবাদতে লিপ্ত থাকে তারও পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি শবেকদরের রাতে ঈমান ও একিন সহকারে ইবাদত করে তারও সকল গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন (বুখারী ও মুসলিম)।
রোজা একটি ধৈর্যের প্রশিক্ষণ, ব্যক্তিজীবন গঠন, সমাজের উন্নয়নে, মানবতার সেবা, দ্বীনি দায়িত্ব পালনে পাহাড়সম বাধা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন অপরিসীম ধৈর্য, সেই জন্য রাসূল (সা) এ মাসকে ধৈর্যের মাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটা সবরের মাস আর সবরের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।’ অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেছেন : কেবল আহারাদি থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়। অশ্লীল কথাবর্তা ও অশালীন আলোচনা থেকে দূরে থাকাই আসল রোজা। অতএব হে রোজাদার! যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় বা তোমার সাথে অভদ্রতা করে তাহলে তাকে বলো : আমি রোজাদার। (ইবনে খোযায়মা ও ইবনে হিক্বাম)
সুতরাং রোজার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পাশবিকতাকে দমন এবং নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের সুন্দর ব্যবস্থা বিদ্যমান। আজকে অশান্ত পৃথিবীর সর্বত্র খুন, রাহাজানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, জুলুম-নির্যাতন, অশ্লীলতা বেহায়াপনায় সব কিছই মানুষের পশুপ্রবৃত্তির পরিণাম। বিশ্বব্যাপী অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, দলিত-মথিত মানবতা, মজলুমের ফরিয়াদে ভারাক্রান্ত আকাশ-বাতাস। পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তায় বিকলাঙ্গ এবং পঙ্গু মানব সভ্যতা। অথচ আল্লাহতায়ালা পৃথিবীকে বাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর রোজার আত্ম সংযমের প্রশিক্ষণই পারে মনুষের সেই পাশবিকতাকে দমন করতে। রোজার পুরস্কার সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘‘রোজা আমার জন্য আর এর পুরস্কার আমি দেবো।”
১. রমজান হল কুরআন নাজিলের মাস : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : “রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।” (সূরা বাকারা : ১৮৫) রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশ বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কুরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান থেকে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সা.-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ সা:-কে পূর্ণ কুরআন শোনাতেন এবং রাসূল সা:ও তাকে পূর্ণ কুরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দুইবার পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহীহ মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।
২. এ মাসে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়, জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয় : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “রমযান মাস এলে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয় জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শৃংখলিত করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০০)
৩. এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদরের ন্যায় বরকতময় রজনী : মহান আল্লাহ বলেন, “লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাত্রে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হন প্রত্যেক কাজে, তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিময় এ রজনী, ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।” (সূরা আল ক্বদর : ৩-৫)
৪. এ মাস দো’আ কবুলের মাস : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “(রামাদানের) প্রতি দিন ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) আল্লাহর কাছে বহু বান্দা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেক বান্দার দো’আ কবুল হয়ে থাকে (যা সে রমযান মাসে করে থাকে)।” (সহীহ সনদে ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত, হাদিস নং ৭৪৫০)
৫. রোজার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেন : একটি হাদিসে কুদসিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আল্লাহ বলেন, “বনি আদমের সকল আমল তার জন্য, অবশ্য রোযার কথা আলাদা, কেননা রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দেবো।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০৫)
৬. রোযা রাখা গোনাহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্ষমালাভের কারণ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোযা রাখবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৯১০)
৭. রোজা জান্নাত লাভের পথ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে বলা হয় ‘রাইয়ান’। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোযাদারগণ প্রবেশ করবে। অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে নাৃ রোযাদারগণ প্রবেশ করলে এ দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে আর কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৭৯৭)
৮. সিয়াম রোযাদারের জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: “কিয়ামতের দিন রোযা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, ‘হে রব! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির কামনা হতে বাধা দিয়েছি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ কুরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতের বেলায় ঘুমাতে দেয়নি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। ফলে এ দুয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদ, হাদিস নং ৬৬২৬)
৯. রোযা জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তিলাভের ঢাল : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে বান্দাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখে আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মধ্যে ৭০ বছরের দূরত্ব তৈরি করেন।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪)
১০. এ মাসের রোযা রাখা একাধারে বছরের দশ মাস রোযা রাখার সমান : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রামাদানের রোযা দশ মাসের রোযার সমতুল্য, ছয় রোযা দুই মাসের রোযার সমান, এ যেন সারা বছরের রোযা।
১১. রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ! রোযাদারের মুখের গন্ধ কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মিসকের চেয়েও সুগন্ধিময় হবে।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪)
১২. রোযা ইহপরকালে সুখ-শান্তি লাভের উপায় : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “রোজাদারের জন্য দুটো খুশির সময় রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি স্বীয় প্রভু আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার সময়।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০৫)
তাকওয়া অর্জনই প্রধান উদ্দেশ্য : সিয়াম ছাড়া অন্য ইবাদাত তাকওয়া সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলোর মধ্যে যেমন নামাজের মাধ্যমে মানুষকে দেখানোর সুযোগ রয়েছে, জাকাতের মাধ্যমে মানুষ দেখতে পায়, অন্তত যাকে জাকাত দেয়া হল সে তো জানতে পারে। হজ পালনে মানুষ বুঝতে পারে। কিন্তু রোজা যদি কেউ একান্তে গোপনে ঘরে নিভৃত কোণে বসে পানাহার করে তা কোনো মানুষ দেখতে পায় না, সেই ক্ষেত্রে কেবলমাত্র আল্লাহভীতি বা তাকওয়ার গুণাবলিই লোকচক্ষুর অন্তরালে ব্যক্তিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। আর তাকওয়ার এই প্রশিক্ষণ শুধুমাত্র রমজান মাসের জন্য নয় বরং তার জীবন চলার পথে যাবতীয় অন্যায়, দুর্নীতি, পাপ, খারাপ কাজ থেকে লোক ভয় নয়, আল্লাহর ভয়ে বিরত থাকার এক উন্নততর প্রশিক্ষণ তৈরি করে দেয়।
আর মুমিনের জীবনে তাকওয়া হলো সিরাতুল মোস্তাকিম থেকে বিচ্যুত হওয়ার সার্বক্ষণিক ভয়। যে কোন মুহূর্তে সেও বিচ্যুত হতে পারে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকে। রোযার মূল কাজ এমন তাকওয়ার বৃদ্ধি। তাই তাকওয়া নিছক ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও যৌনতাকে দমিয়ে রাখার সামর্থ্য নয়, বরং সর্ব প্রকার জৈবিক, আত্মিক ও আর্থিক কুপ্রবৃত্তি দমনের ঈমানী শক্তি। এমন তাকওয়া থেকেই প্রেরণা আসে আল্লাহপাকের হুকুমগুলি জানার এবং সে সাথে সেগুলি অনুসরণের। সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি এক দিকে নফসের যাবতীয় দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহী ও অবাধ্য নফসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। সমস্ত জুলুম-অনাচার, অত্যাচার ও পাশবিকতার বিরুদ্ধে হয়ে ওঠে সংগ্রামী।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।