ঢাকামঙ্গলবার , ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উদ্যোক্তা
  6. কর্পোরেট
  7. কৃষি ও প্রকৃতি
  8. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. পর্যটন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

১৯৭৩ সালের পর ডলারের সবচেয়ে বড় পতন

Md Abu Bakar Siddique
জুলাই ২, ২০২৫ ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

১৯৭৩ সালের পর ডলারের সবচেয়ে বড় পতন

বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে ডলারের অবস্থান বরাবরই ছিল শক্তিশালী। কিন্তু ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপর্যয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাজারে এক নতুন অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। এ সময়ের মধ্যে ডলারের মান ১০ শতাংশের বেশি কমেছে, যা ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতন হিসেবে ধরা হচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের এই নেতিবাচক গতি শুধু বিনিয়োগকারীদের নয়, রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের মুদ্রার বিপরীতে ডলারের এই দুর্বলতা বহুবিধ প্রভাব ফেলছে বিশ্ববাজারে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৯৭৩ থেকে বর্তমান

১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণমান ত্যাগ করার পর প্রথম বড় ধরনের দরপতনের সম্মুখীন হয় ডলার। সেই সময় ছিল ভিন্ন এক বিশ্ব—যেখানে বৈশ্বিক অর্থনীতি ছিল একটি পুনর্গঠনের পর্যায়ে। তেলের দামে হঠাৎ উল্লম্ফন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মুদ্রানীতির অনিশ্চয়তা মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল এক জটিল পরিবেশ। আর তার ফলেই দেখা দিয়েছিল ডলারের বড়সড় পতন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে ১৯৭৩ সালের তুলনা করলে কিছু মিল যেমন আছে, তেমনি পার্থক্যও রয়েছে। এইবার ডলারের পতনের নেপথ্যে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এককেন্দ্রিক বৈশ্বিক কৌশল ও বাণিজ্যনীতির কঠোরতা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি, উচ্চ শুল্ক আরোপ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহযোগিতার প্রতি উদাসীন দৃষ্টিভঙ্গি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। আর সেই আস্থার অভাবই ডলারের উপর চাপ বাড়িয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি ও বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে একতরফাভাবে বাণিজ্য চুক্তি বাতিল, শুল্ক বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অনীহা মার্কিন অর্থনীতিকে ধাক্কা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রকে আর আগের মতো ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ মনে করছেন না।

বিশ্লেষক স্টিভ ইংল্যান্ডারের ভাষায়, “ডলার দুর্বল হচ্ছে কি না—এটাই মূল প্রশ্ন নয়; বরং, বিশ্ব এই দুর্বলতাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করছে, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

ডলারের দুর্বলতায় একদিকে রপ্তানিকারকরা সাময়িকভাবে কিছু সুবিধা পেলেও, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি, সরকারি ঋণের বোঝা এবং সুদ হার বৃদ্ধির শঙ্কা বিনিয়োগকারীদের আরো দ্বিধায় ফেলছে।

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে যে দিনটিকে চিহ্নিত করেন এবং উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, সেদিন থেকেই ডলারের পতনের গতি বাড়তে থাকে। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র বৈদেশিক বাণিজ্যেই নয়, বরং শেয়ারবাজার, বন্ড ও বিদেশি মুদ্রা বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারক দেশগুলো ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে বাধ্য হয়, যার ফলে ডলারের আন্তর্জাতিক লেনদেন কমে আসে। বিশেষ করে, সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজারে আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হয়।

ডলারের পতনে বিশ্ববাজারে প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ডলারের পতন শুধু যুক্তরাষ্ট্রকেই নয়, বরং পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করছে। বিশ্বের বড় বড় পেনশন ফান্ড, ট্রাস্ট এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এখন বিকল্প মুদ্রা ও অঞ্চল খুঁজতে শুরু করেছে। ইউরোপের ইউরো, চীনের ইউয়ান কিংবা এমনকি ক্রিপ্টো মুদ্রার দিকেও অনেকের আগ্রহ বাড়ছে।

একই সময়ে মার্কিন ডলার দুর্বল হওয়ার কারণে, ইউরোপের ইউরোস্টক্স ৬০০ সূচকের মুনাফা ডলারে রূপান্তর করলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে, যেখানে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক বাড়লেও তা ডলারের দামে মাত্র ১৫ শতাংশ মুনাফা দেখাচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, ডলারে মুনাফা হিসাব করলে প্রকৃত আয় ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি ‘মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা’ যা বিনিয়োগকারীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল রিজার্ভের ওপর রাজনৈতিক চাপ, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং বৈদেশিক কূটনীতিতে একঘেঁয়েমি এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।

বিশেষ করে ট্রাম্প ও ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যানের মধ্যে মতানৈক্য এবং ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার ঘটনা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।

মার্কিন নাগরিকদের জন্যও এর প্রভাব পড়েছে সরাসরি। বিদেশ ভ্রমণের খরচ বেড়েছে, আন্তর্জাতিক পণ্যের দাম বেড়েছে এবং বৈদেশিক সেবা গ্রহণ ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তি, ওষুধ, পরিবহন খাতেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে ডলারের নেতৃত্বাধীন আধিপত্যের চিত্র এখন প্রশ্নবিদ্ধ। একসময় যেসব দেশ নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে ডলারকেই প্রধান মনে করত, এখন তারা বিকল্প মুদ্রা অন্তর্ভুক্ত করছে। চীন, ভারত ও রাশিয়া এরই মধ্যে স্বর্ণ ও ইউয়ানে রিজার্ভ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

ডলারের এই ঐতিহাসিক পতন কি সাময়িক, না কি এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকটের সূচক—এই প্রশ্ন এখন অর্থনীতিবিদ, বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকদের সামনে। বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ, মুদ্রানীতি ও বাণিজ্য কাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ডলারের এই পতনের পেছনে একাধিক কাঠামোগত কারণ রয়েছে।

বিশ্ব বাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বিচক্ষণ। যুক্তরাষ্ট্র যদি আন্তর্জাতিক আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ডলার হয়তো তার ‘বিশ্বমুদ্রা’ হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান হারাতে পারে।

তবে এটাও ঠিক যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভিত এখনও শক্তিশালী। প্রয়োজন কেবল একটি স্থিতিশীল, সহনশীল এবং বৈশ্বিক অংশগ্রহণে বিশ্বাসী নেতৃত্ব। না হলে ডলারের পতন ২০২৫-এর বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন এক অনিশ্চয়তার যুগ শুরু করতে পারে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।