নিজস্ব প্রতিবেদক
হাওর অধ্যুষিত মিঠামইনে নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীহাওর অধ্যুষিত মিঠামইনে নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভবিষ্যতে হাওর অঞ্চলে জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত সব সড়ক এলিভেটেড হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আগামীতে হাওর অঞ্চলের প্রতিটি রাস্তা হবে এলিভেটেড। এটা মাটি ভরাট করে না, এলিভেটেড করা হবে। যাতে বর্ষাকালে পানির প্রবাহ ঠিক থাকে, মাছ চলাচল করতে পারে।’ মঙ্গলবার হাওর অধ্যুষিত মিঠামইনে নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামেই সেনানিবাসের নামকরণ করা হয়। হাওর এলাকার মানুষের জীবনসংগ্রামের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিঠামইন এলাকাটি বর্ষাকালে ছোট ছোট দ্বীপের মতো হয়ে যায়। এখন ঠিক তার বিপরীত। এখন আমরা
দেখছি ফসলে ভরে গেছে। রাস্তাঘাট আছে। কিন্তু বর্ষাকালে ভিন্ন চেহারা। এই অঞ্চলের মানুষকে জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়।’
মিঠামইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসটি রাষ্ট্রপতির বাড়ির পাশে ঘোড়াউত্রা নদীর চরে নির্মিত। সরকারপ্রধান সেটি উদ্বোধনের পর একটি আমগাছের চারা রোপণ করেন। এরপর তিনি সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে যান। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেন সেনা সদস্যরা। সেন সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন সরকারপ্রধান।বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের গুরুত্ব তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এটি হাওর অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাংশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও জোরদার হবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ, যিনি আমাদের রাষ্ট্রপতি, তিনি এ অঞ্চল থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। সেই ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭৩-এর নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছেন এবং জনগণের সেবা করে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দুর্গম অঞ্চলের মানুষের পাশে থাকা, তাদের সুখ-দুঃখের সাথি হওয়া, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তিনি যখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, তখন ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এই অঞ্চলে একটা সেনানিবাস করার। তাঁর উদ্দেশ্য, সেনানিবাস হলে এই অঞ্চলের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। তাঁরই ইচ্ছায় সেনানিবাসটি আমরা গঠন করেছি। তাঁর নামেই এই সেনানিবাস আমরা উৎসর্গ করেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি প্রতি ক্ষেত্রে যখন যে দায়িত্ব পালন করেছেন, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর বিরাট অবদান রয়েছে। তিনি নিবেদিতপ্রাণ এবং সৎভাবে জীবন যাপন করে এ দেশের মানুষের সেবা করে গেছেন। কাজেই তাঁর নামে এই সেনানিবাস করতে পেরে আমরা সত্যিই খুব আনন্দিত।’
সেনানিবাস উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের উদ্বোধন শেষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে তার পৈতৃক নিবাস কামালপুরে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে সেখানে পৌঁছান তিনি। এসময় রাষ্ট্রপতি ও তার সহধর্মিণীসহ অন্যান্যরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
জানা গেছে, জোহরের নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একই টেবিলে দুপুরে খাবার খাবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে হাওরের ২০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। সঙ্গে থাকবে গরু-মহিষের দুধ দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী অষ্টগ্রামের পনির। এই পনিরের ঐতিহ্য দিল্লির মুঘল সম্রাটের দরবার পর্যন্ত ছিল।
রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দিনব্যাপী সফরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টা ২২ মিনিটে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হামিদ সেনানিবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
দীর্ঘ দুই যুগ পরে আবারও কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন সফরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতির বাড়িতে দুপুরের খাবার শেষে বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন মিঠামইন সদরের হেলিপ্যাড মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে।
বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে ১৯৯৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার মিঠামইন সফর করেন। তখন আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী আবার মিঠামইন সফরে এসেছেন।