নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম কবে শুরু হবে- সে অপেক্ষার যেন শেষ নেই। দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়য়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর অর্ধেকের বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ঢাকায়। আইন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বয়স এক যুগেরও বেশি। বারবার দেওয়া সময় পার হলেও এখনও অনেকে সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি। এগুলোর কোনোটি আংশিক গেছে। আবার কোনোটি জমি কিনে নির্মাণকাজ শুরু করেছে। কোনোটি শুধু জমি কিনেছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে এবার কিছুটা কঠোর হয়েছে উচ্চশিক্ষা তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
বারবার সময় দেওয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় চেষ্টা না করায় চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি। নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারবে না স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি।
শিক্ষা নিয়ে ব্যবসার মানসিকতা পরিহার করতে এই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি সম্প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না করে জ্ঞান বিতরণ ও একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী গ্র্যাজুয়েট তৈরির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, আইন ও বিধিবিধান মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন। নিজেদের ইচ্ছে আর সুবিধামতো বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হোক, সেটা চাই না। আবার এটাও চাই না যে, শিক্ষাকে পণ্য বিবেচনা করে শিক্ষার নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হোক।
শহর থেকে বাইরে গেলে শিক্ষার্থী পেতে সংকট হওয়ার আশঙ্কায় অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সরতে চায় না। কালো তালিকা থেকে রেহাই পেতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকার বাইরে জমি কিনলেও নগরীর অভিজাত আবাসিক এলাকাজুড়ে ভাড়াবাড়িতে ক্যাম্পাস নিয়ে বহাল-তবিয়তে আছে। এতে যানজটের আগ্রাসনেই শুধু আবাসিক এলাকা কবলিত হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয় দূরে থাক, কলেজের আমেজ বা প্রাণও পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। ব্যাঙের ছাতার মতো করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে বনানীর ছোট্ট এলাকাতেই আছে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। ধানমন্ডি রাস্তার দুই পাশে রয়েছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সারি সারি ১৩টি ক্যাম্পাস। মিরপুর রোডে ও উত্তরায় রয়েছে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। এমনকি কারওয়ান বাজার মাছের আড়তেও গড়ে উঠেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ীভাবে স্থাপন ও পরিচালনার সনদ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামো নির্মাণাধীন ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন রয়েছে। ২১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি ক্রয় করেছে, কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেনি। ২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ফাউন্ডেশনের নাম ক্রয়কৃত জমিতে নির্মিত অবকাঠামোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে।
দেশজুড়ে আউটার ক্যাম্পাস খুলে সার্টিফিকেট বিক্রি করত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬ সালে আদালতের রায়ে দারুল ইহসানের সব আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০০৬ সালে নানা অনিয়মের অভিযোগে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও কুইন্স ইউনিভার্সিটির সাময়িক অনুমোদন বাতিল করা হয়। পরে বন্ধ করা ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি এবং পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি আদালতের রায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে।
দেশে ১৯৯২ সাল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানো ও বিদেশে শিক্ষার্থীদের চলে যাওয়া নিরুৎসাহিত করা। শুরুর দিকে গ্রহণযোগ্য উদ্যোক্তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছিলেন। এতে দেশে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, যেগুলো পড়াশোনার মান বজায় রেখেছে। অবশ্য ২০০১ সালের পর রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে, যা এখনও চলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ও ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সনদ বিক্রির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার, চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, গণ-বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, বগুড়ার পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি), শরীয়তপুরের জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নিয়োগকৃত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নেই। শিক্ষক স্বল্পতা এবং অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগে সাতটি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টির দ্বন্দ্ব আছে। অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। বগুড়ার পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অননুমোদিত এলএলবি (অনার্স) প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে।
নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নির্মাণাধীন স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে পিপলস ইউনিভার্সিটি নরসিংদীতে দুই একরের ওপর জমিতে ১১ তলাবিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। নির্মাণাধীন আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সাভারের বিরুলিয়ায় ৩ দশমিক ৩০ একর জমিতে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভবন নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণাধীন ভবনে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাড্ডার সাঁতারকুলে ১ দশমিক ৩ একর জমিতে ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৩ তলাবিশিষ্ট ১টি স্টিল ভবন এবং পাশে ৪২ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নর্দান ইউনিভার্সিটির আশকোনায় ১ দশমিক ৫৩ একর জমিতে ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট দোতলা একটি ভবনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাশে ৮ তলাবিশিষ্ট একটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান আছে।
চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি আরেফিন নগরে ১ দশমিক ৫ একর জমিতে ২টি ভবনে আংশিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটির রূপগঞ্জে ৫ দশমিক ২৯ একর জমিতে ৬ তলাবিশিষ্ট একটি ভবন আছে। ১১ তলাবিশিষ্ট আরেকটি ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। নির্মাণাধীন ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি সাভারের কলমায় ৪ দশমিক ৫৩ একর জমিতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে ৫ তলাবিশিষ্ট ভবনে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকার তুরাগে ১ দশমিক ৬৫ একর জমিতে ৩০ হাজার ২২৬ বর্গফুট আয়তনের ২ তলাবিশিষ্ট ভবনসহ একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস বাড্ডার ভাটারায় ১ দশমিক ৭৫ একর জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস মোহাম্মদপুরে রামচন্দ্রপুর ১ দশমিক ৮ জমিতে ২৮ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট দোতলা একটি ভবনে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। আশা ইউনিভার্সিটি তুরাগে ১ দশমিক ৯৮ একর জমিতে একটি টিনশেড ভবন তৈরি করে সেখানে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৪ বিঘা জমিতে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালায়।
নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে। এগুলো হচ্ছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, সিলেটের নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি, রাজশাহীর বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, কুমিল্লার সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দপুরে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বিএইউএসটি), কাদিরাবাদে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বিএইউইটি)।
নির্ধারিত পরিমাণ জমি কিনলেও নির্মাণকাজ শুরু করেনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, চুয়াডাঙ্গার ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, ঈশাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ফেনী ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, জামালপুরের শেখ ফজিলতুন্নেছা মুজিব ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বিএইউএসটি), দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি, বরিশালের ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মান ইউনিভার্সিটি।
নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম জমি রয়েছে সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটি এবং প্রাইম ইউনিভার্সিটি। ফাউন্ডেশনের নামে জমিতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়।
একাধিক ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি ও আর নিজাম রোড, পাঁচলাইশ এবং চট্টগ্রামে একাধিক ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ইবাইস ইউনিভার্সিটির নামে নিজস্ব জমি নেই। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব। একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই।
দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা নামে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে। ইউজিসির ওয়েবসাইটে এর ৯/বি পরওয়েল কারনেশন, সেক্টর-৮, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ ঠিকানা ও ৪৩টি প্রোগ্রামের নাম আপলোড করা আছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামধারী মিরপুরের একটি গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান দাবি করে আদালতে রিট করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে আদালতে বর্তমানে একাধিক মামলা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, এত সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দরকার নেই। হাতেগোনা ৫-৬টি ছাড়া অন্যগুলোতে কোনো লেখাপড়া হয় না। কেবল ছাত্র ভর্তি করে ক্লাস করায় আর সার্টিফিকেট বিক্রি করে। এতে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাপ-মা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভর্তি হওয়ার পর সেখানে লেখাপড়া হয় না। ক্লাস হয়, পরীক্ষা হয় আর সার্টিফিকেট বিক্রি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান সময়ের আলোকে বলেন, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা নানা অনিয়ম করছে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মেনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হবে। বাণিজ্যিকীকরণ করা যাবে না।
তিনি বলেন, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এমএ খালেক একাই ৮শ কোটি টাকা লুটপাট করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে শিক্ষা বাণিজ্য করছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে ইতিমধ্যে চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। আইন না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।