ঢাকাশুক্রবার , ২০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উদ্যোক্তা
  6. কর্পোরেট
  7. কৃষি ও প্রকৃতি
  8. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. পর্যটন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

এসএমই বিকাশে এখনো বড় বাধা ব্যাংকঋণ

Md Abu Bakar Siddique
মে ১২, ২০২৫ ৫:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশের কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের বিকাশে এখনো অন্যতম সমস্যা ব্যাংক থেকে ঋণপ্রাপ্তি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে একদিকে নানা ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবীকে গ্যারান্টার হিসেবে দেখাতে হয়, যা অনেক সময়ই দেখানো কঠিন বলে জানিয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, একজন নারী উদ্যোক্তা তখনই ব্যাংক থেকে ঋণ পান, যখন তার ব্যবসাটা একটা পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। অর্থাৎ শুরুতে কোনো ব্যাংকই একজন উদ্যোক্তাকে ঋণ দেয় না। এর পাশাপাশি পারিবারিক প্রতিবন্ধকতাও নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার-সিএসএমই নারী উদ্যোক্তা সমাবেশ, পণ্য প্রদর্শনী ও মেলায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ নারী উদ্যোক্তাই এমন অভিযোগ করেছেন। নারীদের উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী করে তোলা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গতকাল শেষ হয়েছে।

মেলায় অংশ নেওয়া সোলোসের স্বত্বাধিকারী সায়মা সুলতানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতার কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমার মধ্যে সবসময় নিজে স্বাধীনভাবে কিছু একটা করার তাড়না ছিল। অনেক ভেবেচিন্তে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেননা, এখানে আমি নিজে কাজ করার পাশাপাশি আরও ১০ জন নারীকে কাজ করার সুযোগ করে দিতে পারব। আমার এই সিদ্ধান্তে প্রথম বাধা আসে পরিবার থেকে। বাবা-মা বললেন, সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে কাপড় বিক্রি করবা। তারা কিছুতেই এটা মানতে চাননি। কিন্তু আমার আর্থিক ভিত্তি শক্ত হওয়ায় তাদের বুঝিয়ে কাজটা শুরু করতে পেরেছি। প্রাথমিকভাবে আমার নিজের জমানো ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২০২১ সালে অনলাইনে বুটিকসের কাজ শুরু করি। চলতি বছর শাহজালাল ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো কখনোই শূন্য থেকে শুরু করা নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয় না। তখনই একজন নারী উদ্যোক্তাকে ঋণ দেয়, যখন সে মোটামুটি একটা পর্যায়ে যায়। তারপর ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাগজপত্র চায়। আমার ক্ষেত্রে এগুলো কোনো প্রতিবন্ধকতা না হলেও অনেক উদ্যোক্তার জন্যই এগুলো সমস্যা। তবে আমার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে হয়েছে গ্যারান্টার দেখানো। কোনো প্রতিষ্ঠানকে গ্যারান্টার হিসেবে দেখানো যাবে না। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবীকে গ্যারান্টার হিসেবে দেখাতে হবে।’

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফার্মগেটে আমার প্রতিষ্ঠানের শো-রুম আছে। তবে অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশেই পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকি। ভবিষ্যতে আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থাৎ দেশের বাইরে পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে রপ্তানি খাতে অবদান রাখতে চাই।’

বগুড়ার হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করা মোছা. আফসানা পারভীন সুরভী খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০১৭ সালে নিজের উদ্যোগে কাজ শুরু করি। ব্যবসার পরিধি বাড়ার পর ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ি। তারপর সরকারি খাতে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিই। প্রথমে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ভালোভাবে সেটা শেষ করায় পরে তা বাড়িয়ে দেয়।’ বর্তমানে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করছেন তিনি।

জামালপুরের হাতের তৈরি নকশিকাঁথা এবং সালোয়ার-কামিজ নিয়ে কাজ করা অপর এক উদ্যোক্তা মাসুমা আক্তার বলেন, পড়াশোনা শেষ করে শুধু সংসার আর সন্তান পালন করেই জীবন শেষ করতে বিবেক বাধা দিচ্ছিল। স্বামীকে কিছু করার কথা বললে পরিবারের সচ্ছলতার বিষয়ে সাহায্য করার জন্য কিছু করতে চাই- এমন কথা শুনে স্বামী বলেন, মন দিয়ে সংসার কর, সন্তান মানুষ কর। আর কিছু করতে হবে না। তার পরও আমি হাল ছাড়িনি। শেষ পর্যন্ত ছেলেকে বিভিন্ন সময়ে উপহার দেওয়া ৩ হাজার টাকা দিয়ে আমার ব্যবসা শুরু করি ২০১৪ সালে। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ঋণ নিতে অনেক ব্যাংকে গিয়ে নিরাশ হয়ে শেষ পর্যন্ত কৃষি ব্যাংকে ভালো সাড়া পেয়েছি। কয়েক দফায় বিনা জামানতে সর্বোচ্চ ৮ লাখ পর্যন্ত এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। ব্যাংকের এই সহযোগিতা না পেলে আমার উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন হতো। এনআরবিসি, ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে হয়রানি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমশক্তি এসএমই খাতের। বর্তমানে এসএমই খাতে গড় সুদের হার সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৭ শতাংশ, সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ২ শতাংশ।

নারীদের ঋণপ্রাপ্তি আরও সহজ করতে হবে: গভর্নর

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ নারীরা পাচ্ছেন জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। তাদের জন্য কীভাবে ঋণ বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের আর্থিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেব। তবে তা শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল বাড়িয়ে নয়। কারণ, সেখান থেকে দিলে নতুন টাকা তৈরি করতে হয়। নারীদের ঋণ দিতে হবে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে, তাদের অধিকার বিবেচনায় রেখেই। নারীদের কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আমাদের চেষ্টা করতে হবে।’

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। তিনি বলেন, নারীদের এগিয়ে নিতে হলে তাদের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে হবে। আর এ জন্যই তাদের কাজ করতে হবে। আর ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। জানা গেছে, এবারের মেলায় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ৪৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। আর মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন ৬৮ জন নারী উদ্যোক্তা। এ সময় সফল ছয়জন নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা এবং পুরস্কার বিতরণও করা হয়েছে। এ ছাড়া মেলায় প্রতিদিনই সিএমএসএমই খাত ও সমসাময়িক অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।