প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই আছে বাংলাদেশ। কয়েক দিন আগে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের কারণে উপকূল ভাগসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হলে লাখ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। এই ধকল না কাটতেই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে উত্তর–পূর্বাঞ্চলের তিন জেলা ও উত্তর–মধ্যাঞ্চলের এক জেলায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর এক সতর্কবার্তায় জানায়, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বান্দরবান, পটুয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার কিছু স্থানে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সিলেটের দুটি সীমান্ত এলাকা গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুই উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সব নদ–নদীর পানি বেড়েছে। কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদের পানি ইসলামপুর পয়েন্টে গত শনিবার বেলা তিনটায় ১০ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কোম্পানীগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের কারণে ধলাই নদের পানি বেড়েছে। এ জন্য উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাফলং এলাকায় ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি বেড়েছে। উপজেলায় ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে পাহাড়ি ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে, এমন শঙ্কা আছে। এ জন্য এই দুই উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা ও পর্যাপ্ত শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে আসামের ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ১০ হাজার মানুষকে ত্রাণশিবিরে সরানো হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা রাজ্যের ১৮টি জেলায় সতর্কতা জারি করার কথা জানিয়েছেন। অরুণাচল প্রদেশ ও মেঘালয়েও গত কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে।
রোববার প্রথম আলোর সিলেট অফিস থেকে জানানো হয়, সেখানে বৃষ্টি থেমে গেছে। নদীর পানিও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে উজানের ঢল না এলে বন্যার আশঙ্কা কম। কিন্তু আসামে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সিলেট অঞ্চলে পানি বাড়বে এবং বিপদ ডেকে আনতে পারে। উজানের পানির ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু ভারত পানিপ্রবাহ ও বৃষ্টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়।
এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে সারা দেশের নদীগুলো ভরাট হয়ে গেলেও এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেই। যদিও নদী খননের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। ভারী বৃষ্টি স্থায়ী হোক বা না হোক সরকারকে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। সিলেট অঞ্চলে এটি আরও বেশি প্রয়োজন। এখানে ভারী বৃষ্টিতে টিলাধস বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় টিলা ধসে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো তেমন কার্যকর না থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও বাড়াতে হবে। প্রস্তুত থাকতে হবে কোথাও বন্যা দেখা দিলে যাতে আক্রান্ত মানুষগুলোকে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।