হজ একটি প্রেমময় ইবাদতের নাম। আল্লাহ ও বান্দার মাঝে প্রেমের একটি অসাধারণ ঝলক ফুটে ওঠে হজের মাধ্যমে। হজ বান্দাকে ধুয়ে-মুছে পাক-সাফ করে দেয়। আল্লাহর ভালোবাসায় বিভাময় করে তোলে। প্রেমময় হজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনন্য সব পুরস্কারে ধন্য হয়।
এক. হজ শ্রেষ্ঠ আমলগুলোর অন্যতম
আল্লাহতায়ালা যেসব আমলকে বিশেষভাবে পছন্দ করেন, অফুরন্ত সওয়াব দিয়ে ধন্য করেন- হজ সেগুলোর অন্যতম। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষায় শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে ইমান ও জিহাদের পরই হজের অবস্থান। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কোন ‘আমলটি উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘অতঃপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ ‘অতঃপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘মাকবুল হজ।’(বুখারি, ২৬)
দুই. হজ জিহাদের সমতুল্য সওয়াব বয়ে আনে
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার সুমহান লক্ষ্যে যারা জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত সওয়াব ও অনন্য মর্যাদা লাভ করে। তদ্রূপ হজের মাধ্যমেও বান্দা জিহাদের মতো অফুরন্ত সওয়াব ও অনন্য মর্যাদা লাভে সক্ষম হয়। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! জিহাদকে আমরা সর্বোত্তম আমল মনে করি। কাজেই আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বললেন- না, বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হলো, হজ্জে মাবরুর। (বুখারি, ১৫২০)
তিন. হজ ব্যক্তিকে নিষ্পাপ বানিয়ে দেয়
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ হতে ফিরে আসবে, যেদিন তার মা জন্ম দিয়েছিল। (বুখারি, ১৫২১)
চার. হজ দারিদ্র্য ও পাপ দূর করে
দারিদ্র্য যাপিত জীবনের একটি বড় সমস্যা। দারিদ্র্য কখনো কখনো জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। নবিজি (সা.)-এর ভাষ্যমতে, অধিক পরিমাণে হজ ও উমরাহ আদায় দারিদ্র্য দূরীকরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। পাপের পংকিলতা থেকে জীবনকে পাক-সাফ করে দেয়। আমর ইবন দীনার (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ ও উমরাহ পরস্পর পালন (হজ সমাপনের পর উমরাহ এবং উমরাহর পর হজ) করবে। কেননা তা (এ দুটি) অভাব-অনটন ও পাপকে দূর করে দেয়। যেমন- (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে থাকে। (নাসায়ি, ২৬৩০)
পাঁচ. হজ পূর্বের সব গোনাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়
আল্লাহর প্রেম লাভের পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে গোনাহের জালে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া। গোনাহের গান্দেগি থেকে বেঁচে আল্লাহর আনুগত্যের সুরভিত পথে এগিয়ে গেলেই বান্দাহ আল্লাহর ভালোবাসা লাভে ধন্য হয়। এই গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হওয়ার একটি অনন্য মাধ্যম হচ্ছে হজ। হজ একজন ব্যক্তির পূর্বের সব গোনাহকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই হজ পূর্বের সব গোনাহকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। (মুসলিম, ১২১)
ছয়. কদমে কদমে সওয়াব মেলে
হজ আল্লাহর কাছে এত প্রিয় আমল যে, হজের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া ব্যক্তির প্রতি কদমে কদমে আল্লাহ সওয়াব দান করেন। গোনাহ মাফ করে দেন। মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হজ আদায়কারীর উট (বাহন) যতবার পা ফেলে বা হাত রাখে প্রতিবারের বিনিময়ে আল্লাহ তাঁর জন্য নেকি লিখে দেন, গোনাহ মুছে দেন এবং তাঁর মর্যাদা বুলন্দ করেন। (শুয়াবুল ঈমান, ৪১১৬)
সাত. হজ আদায়কারীরা আল্লাহর প্রতিনিধি
হজ এবং উমরাহ আদায়কারীরা আল্লাহর এত প্রিয় যে, আল্লাহ তাদেরকে নিজের প্রতিনিধির মর্যাদা দান করেন। তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করে নেন। আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হজযাত্রী ও উমরার যাত্রীরা আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা তাঁর নিকট দোয়া করলে তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাঁর নিকট মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন। (ইবনে মাজাহ, ২৮৯২)
আট. জমজমের পানি পানে উদ্দেশ্যপূরণ
হজ ও উমরাহ আদায়কারীরা প্রচুর পরিমাণে জমজমের পানি পানের সৌভাগ্য অর্জন করেন। আর জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যেই পান করা হোক, আল্লাহ সে উদ্দেশ্য পূরণ করে দেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হবে তাই পূরণ হবে। (মুসনাদে আহমাদ, ১৪৮৪৯)
নয়. আরাফার দিন গুনাহমুক্তির সৌভাগ্য অর্জন
আরাফার দিন (৯ জিলহজ) অত্যন্ত বরকতময় একটি দিন। এদিন হাজি সাহেবগণ আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন। এদিন আল্লাহতায়ালা অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করে দেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিন আল্লাহতায়ালা এত অধিক পরিমাণ মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন, যা অন্য কোনো দিন দেন না। (মুসলিম, ১৩৪৮)
দশ. মাবরুর হজের বিনিময় কেবলই জান্নাত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক উমরাহর পর আর এক উমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো হজ্জে মাবরুরের প্রতিদান। (বুখারি, ১৭৭৩)