ঢাকাশুক্রবার , ২০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উদ্যোক্তা
  6. কর্পোরেট
  7. কৃষি ও প্রকৃতি
  8. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  9. খেলাধুলা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. পর্যটন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঈদে বাড়ি ফেরা

Md Abu Bakar Siddique
জুন ১৫, ২০২৫ ১২:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এই ঈদে আমার বাড়ি ফেরার অভিজ্ঞতাটি ছিল অস্বাভাবিক, রোমাঞ্চে ভরপুর এবং ক্লান্তিকর হলেও মনে রাখার মতো। ছোট একটি আফ্রিকান দ্বীপ দেশ থেকে শুরু করে, নানা ভাষাগত সমস্যা, ট্রানজিট জটিলতা, ট্রেনের ঝামেলা পেরিয়ে অবশেষে খুলনায় আমার গন্তব্যে পৌঁছানো। আফ্রিকার দ্বীপ সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে থেকে গ্যাবনের লিব্রেভিলে, তারপর ক্যামেরুনের দোয়ালায় কিছুটা সময় কাটাই। ফরাসি ভাষার প্রতিবন্ধকতা ও ভ্রমণের ক্লান্তিতে মনে হলো ঈদে ঘরে ফেরা এখনই জরুরি। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে দোয়ালা থেকে আদ্দিস আবাবায় পৌঁছে এক রাতের জন্য এয়ারলাইন্সের ফ্রি হোটেলে থাকার সুযোগ পাই। সেখান থেকে বোম্বে, তারপর ইমিগ্রেশন ও লাগেজ জটিলতা শেষে হোটেলে বিশ্রাম নেই। বোম্বে থেকে কলকাতা পৌঁছাতে তিনটি ট্রেন, পুলিশের সহায়তা, ভুল স্টেশন, ট্রেনে সিট না পাওয়া, অবহেলা, টাকা দিয়ে বেড ভাড়া করে রাত কাটানো… সবমিলিয়ে এক রোলারকোস্টার রাইড। কিন্তু কিছু ভালো মানুষ ও বন্ধুর সাহায্য এ যাত্রাকে সম্ভব করেছে। হাওড়া পৌঁছানোর পর শিয়ালদহ থেকে বেনাপোল, এবং অবশেষে খুলনা। বর্ডারে বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন অফিসারদের আন্তরিকতা মন ছুঁয়ে যায়। পাসপোর্টের পাতাগুলি শেষ, শরীর ও মন ক্লান্ত, তবুও পরিবারের মুখ দেখে সব ক্লান্তি ভুলে গিয়েছিলাম। এই ঈদের এই যাত্রা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। ছয় দিনের জন্য ঈদের ছুটি কাটাতে এসে সাত দিন লেগেছে আসতে।

বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে ১৫৮টি দেশ ভ্রমণ করার পর সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে (Sao Tome and Príncipe) 159 Cape varde transit জটিলতার কারণে যাওয়া হলো না। হঠাৎ করে ফরাসি ভাষা ও ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে না পারায় অনেকটা হতাশা নিয়ে বাড়ি ফেরা চিন্তা করলাম। আর যেহেতু সামনে ঈদ, মনে হলো এখনই সুন্দর সময় দেশে ফেরার। তাছাড়া পাসপোর্টেরও পাতা শেষ। নতুন দেশের ভ্রমণের সুযোগ না থাকায় ঈদের বাড়ি ফেরার কথা মনে পড়ল। কিন্তু বাড়ি ফেরাও অতোটা সহজ নয়। সাও টোমে প্রথমে থেকে Libreville, Gabon-তে ২৭ মে তারিখে প্রায় ১৮ ঘণ্টা কাটানোর পরে কেভাত্রে যাওয়ার প্রোগ্রাম পরিবর্তন করে ক্যামেরণের বাণিজ্যিক শহর দোয়ালাতে চলে আসলাম। মনে হলো, এখানে দুটো দিন কাটিয়ে যাই। কিন্তু সেই আবারও ফরাসি ভাষা জটিলতা ও তেমন কিছু দেখার না থাকায় আরও মন খারাপ হয়ে গেল। তখন বাড়ি আসার টিকিট কাটলাম।

দোয়ালা থেকে বোম্বাই এবং বোম্বাই থেকে কলকাতা ও কলকাতা থেকে ট্রেনে ও ট্যাক্সিতে বাড়ি। সোজা চিন্তা করলাম। আমি আফ্রিকা থেকে বাড়িতে ফিরব জুনের ২ তারিখে। এ সময় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে অনেক আড্ডা হবে, ফাঁকে আমার নতুন পাসপোর্টও হয়ে যাবে।

দোয়ালা থেকে ৩০ তারিখ রাতে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে চেপে বসলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। একসঙ্গে ইন্ডিয়া থেকে এদের শপিং। খুবই সুন্দরভাবে ক্যামেরুন থেকে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা পৌঁছালাম। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার ফ্লাইটে চমৎকারভাবে চলে আসলাম। আদ্দিস আবাবা এয়ারপোর্টেই এয়ারলাইন্স ফ্রি হোটেল দিয়েছিল। হোটেল থেকে দুরু দুরু মনে ইমিগ্রেশনে গেলাম ইথিওপিয়ায় ঢুকার জন্য। ওরা আমার পাসপোর্ট দেখে কিছু বলল না। আমাকে চেক করে ভিসা ছাড়াই ইথিওপিয়ায় প্রবেশের অনুমিত দিল। আমি তো মহাখুশি।

এয়ারলাইন্সের ট্যাক্সি এসে এয়ারপোর্টে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তারপর রওনা দিলাম। এয়ারপোর্টে হোটেলের নাম ছিল ড্রিম লাইনার। ঘুরে দেখে দেখলাম আদ্দিস আবাবা শহর। আগেও অবশ্য আসা হয়েছে কিন্তু এভাবে ঘুরে দেখা হয়নি। চলে গেলাম ওখানকার মিউজিয়ামে ও আদ্দিস আবাবা ইউনিভার্সিটিতে। ওখানকার রাজা চমৎকারভাবে তার প্রাসাদটি দান করে গিয়েছেন ইউনিভার্সিটির জন্য। যা তার বিশাল প্রাসাদ বাগানবাড়ি সবকিছুই পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন ক্লাসরুম থেকে শুরু করে লাইব্রেরি হয়েছে। দেখতে অনেকটা আমাদের মতোই, তো ভালই লাগে যখনই আসি। 

 

৩১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইথিওপিয়া থেকে রওনা দেই বোম্বের উদ্দেশ্যে। যদিও এই ফ্লাইটি একটু ডিলে ছিল কিন্তু যথাসময়ে রাত ২টার দিকে বোম্বে এয়ারপোর্টে পৌঁছায়। তারপর বিশাল লম্বা ইমিগ্রেশন। রাত তিনটা নাগাদ ইমিগ্রেশন শেষ করলাম। তারপর লাগেজ খুঁজতে যেয়ে এক বিশাল ঝামেলা। কোনো ব্যাগের জন্য ট্রলি নেই‌। টানা এক ঘণ্টা কাটানোর পরে মিলে টলি। এয়ারপোর্টের বাইরে সিমকার্ড নিতে নিতে পাঁচটা বেজে গিয়েছে। তারপর এয়ারপোর্টে উবারের ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা। সেখান থেকে টেক্সিতে আগে থেকে বুকিং করা হোটেলে চলে যাই।

হোটেলের দুই কিলোমিটারের মধ্যেই এয়ারপোর্টে। হোটেলে গিয়েই একটা ঘুম দিই। দুই দিন পরে ঘুমানো। ঘুমিয়েছি টানা ছয় ঘণ্টা। তারপর আবার এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছাই ৩টা ১৫মিনিটে। কিন্তু ফ্লাইট ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে পৌঁছালেও এয়ার ইন্ডিয়া আমাকে চেক-ইন করতে দেয়নি।‌ কতক্ষণ কথা বললাম ম্যানেজারের সঙ্গে। কোনো সমাধান হলো না। কোনো উপায় না দেখে ওখান থেকে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করলাম। কিন্তু টিকিটের দাম এত বেশি তা কল্পনার বাইরে। তারপরে হোটেলের এক ভদ্রলোককে ফোন করায় উনি ট্রেনের পরামর্শ দিলেন। তারপর ওখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসের উদ্দেশে রওনা করি। পথে ট্যাক্সি ড্রাইভার অন্য রেলস্টেশনে নিয়ে যায়। তারপর পাশে পুলিশ স্টেশন থাকায় ওখানে অভিযোগ করি। তারপর পুলিশের সাহায্যে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসে পৌঁছাই।

পাক্কা তিন ঘণ্টা এই নাটকীয়তা করে সময় কেটে গেছে। তার মধ্যে ফরেন টিকেট কাউন্টার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ৯টায় একটা ট্রেন ছিল, হাওড়া মেইল এক্সপ্রেস। পুলিশের সাহায্যে এটায় উঠে পড়লাম। কিন্তু এই ট্রেনে কোনো জায়গায় নেই। ফার্স্ট ক্লাসের টিটিই (ভ্রমণকালীন টিকিট পরীক্ষক) খুবই খারাপ ব্যবহার করল বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে। এমনকি পুলিশের কথা বলার পরও। ট্রেনে বাঙালি কিছু স্টাফ ছিল, তারা তাদের থাকার জায়গাটা আমাকে দিয়েছিল এক হাজার টাকার বিনিময়। প্রথম রাতে তো আমি ওদের বিছানায় ছিলাম। পরে সকালে আর একজন টিটি আসেন। উনি আমাকে জরিমানা করে একটি টিকেট দেয়। বলে, নাগপুরের পরবর্তী স্টেশনে সিট পাব। কিন্তু সেই স্টেশন অতিক্রম করার পরও সিটের কোনো হদিস নেই। প্রচণ্ড হতাশা আর ক্লান্ত বিকেলের দিকে দূর নামে একটি স্টেশনে ট্রেন থামে। সেখানে নেমে আইসক্রিম কিনতে যাই। কিন্তু আইসক্রিম কিনতে কিনতে ট্রেনটা ছেড়ে দেয়। হাতে দুটো মোবাইল থাকায় ট্রেনটি ধরতে পারিনি। মোবাইল ধরতে গেলে ট্রেনের হাতল ধরে ওঠা মুশকিল। মোবাইল পড়ে যাবে তাই মোবাইল রেখে দিলাম, ট্রেন ছেড়ে দিলাম।

ওখানকার পুলিশের সাহায্য নিয়ে আমার লাগেজ হাওড়া মেল ট্রেন থেকে নামিয়ে রায়পুর স্টেশনে রাখে। পুরো জার্নিটাই পুলিশ খুব ভালোভাবেই সাহায্য করে। তারপর পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ লিখিয়ে দূর শহরে ঘুরে খাবার খাই। শহরটা ছোট হলেও আমাদের খুলনা শহরের মতোই। তারপর সন্ধ্যায় আরেক ট্রেন ধরে রায়পুর স্টেশনে যাই। সেখানে বিশাল নামে একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি আমাকে আমার লাগেজ ও অন্যান্য জিনিসপত্র পেতে সাহায্য করেন। তারপর হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের World Traveler Group-কে পোস্ট করলে আকাশ নামে একটি বন্ধু আসেন দেখা করতে। সাড়ে সাতটার দিকে রায়পুরে নেমে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রায়পুর শহরটি ভালো করে ঘুরে দেখি। ভালোই লাগে বেশ বড় আছে শহরটি।

তারপর, পুলিশ স্টেশন থেকে লাগেজ নিয়ে স্টেশনে যাই। প্রতিটি স্টেশনে খুব ভিড়। এমনকি ট্রেনের বগিতে ঢোকার জায়গাও নেই। সমস্ত জায়গার মানুষের ব্যাগ, বেডিং দিয়ে ভর্তি। অবশেষে রাত দেড়টার শালিমার এক্সপ্রেস ট্রেন আসে, সেটায় উঠি। ট্রেনটি অত্যন্ত স্লো এবং নোংরা। এখানে খুব একটা কষ্ট করা লাগেনি। কেবিন বয়’রা তাদের একটি বেড আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল ৫০০ রুপির বিনিময়ে। টিটিরাও বেশ আন্তরিকতার ছিল তাই কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এটা দ্রুতগামী ট্রেন নয়। খুবই ধীরে চলে। তার পরের দিন বেলা ১১টার দিকে পাশেই আরেকটি ট্রেন আজাদী দাঁড়িয়েছিল। এটা পুনে থেকে এসেছে, হাওড়া যাবে। তাড়াতাড়ি আমি কয়েকজনকে রিকোয়েস্ট করে ওই ট্রেনটিতে উঠে পড়লাম। ওই ট্রেনে একটু পরিষ্কার ছিল আর বেশ কিছু জায়গাও ছিল থাকার জন্য। টিটিকে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি সিট পেয়ে গেলাম। অবশেষে তিন নাম্বার ট্রেনে রাত সাড়ে আটটায় হাওড়া স্টেশনে পৌঁছালাম।

আগে থেকেই হোস্টেল বুক ছিল। তারপর রাতে কোনোরকম হোস্টেলে গেলাম সেখান থেকেই সুপার মার্কেটে দৌড়ালাম কিছু কেনার জন্য। কিন্তু তেমন কিছুই কিনতে পারিনি। পরে অবশেষে চার তারিখ সকাল ১০টার দিকে রওনা দিলাম শিয়ালদা স্টেশনে। দেখি ১২টা ৪০ মিনিটের আগে কোনো ট্রেন নেই। তারপর অনেক কষ্টে বেনাপোলে আসলাম। বেনাপোল এসে তো মহাখুশি। নতুন বন্দর ওপেন করেছে। খুবই সুন্দর। ভারতের ইমিগ্রেশন বেশ কিছুটা জেরা করে তারপর আমাকে বাংলাদেশ বর্ডারে যেতে দিয়েছে। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে সাহায্য করে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু সাড়ে তিনটায় পৌঁছে কোনোভাবেই পাঁচটার ভিতর খুলনায় পৌঁছাতে পারলাম না।

এদিকে পাসপোর্টের সবগুলো পাতা শেষ হয়ে গেছে। নতুন পাসপোর্ট না করলে মহামুশকিলে পড়ে যাচ্ছি। যাই হোক অবশেষে চার তারিখ সাড়ে সাতটার দিকে বাড়ি ফিরলাম।

ঈদে বাড়ি ফেরার অনেক গল্প রয়েছে স্কুল লাইফে। ঢাকা থেকে খুলনায় আসা যাওয়ার। কিন্তু এই আফ্রিকার ছোট দেশ থেকে কয়েকটি দেশ পাড়ি দিয়ে তারপরে ইন্ডিয়া হয়ে তিনটি ট্রেন পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরা যেন অন্যরকম অনুভূতি। দেশে মাত্র পাঁচটি দিন পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারলাম। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ খুবই ভালো লাগলো। আবারও চলে যেতে হবে। নতুন গন্তব্য অপেক্ষা করছে আগে থেকেই।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।